পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার আলিহাট ইউনিয়নের ইটাই গ্রামে অনুষ্ঠিত হলো গ্রাম বাংলার বিলুপ্তপ্রায় ঐতিহ্যবাহী পাতা খেলা। সোমবার বিকেলে ‘ইটাই ভূমিহীন বহুমুখী সমবায় সম্মতি ও মৎস্য চাষি সমবায় সমিতি’র উদ্যোগে এই ব্যতিক্রমী আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে অংশ নেয় আশপাশের ৬টি ‘তান্ত্রিক’ দল। বাঙালির প্রাণের উৎসব বৈশাখের প্রথম দিনে এমন এক ঐতিহ্যবাহী আয়োজনে অংশ নিতে হাজারো মানুষ ভিড় জমান খেলার মাঠে।
পাতা খেলা শুরুর আগে মাঠের মাঝখানে স্থাপন করা হয় একটি কলাগাছ। এরপর প্রতিটি দল থেকে একজন করে তান্ত্রিক বিভিন্ন ধরনের মন্ত্র পড়ে পাতারূপী তুলারাশি টেনে আনার চেষ্টা করেন নিজেদের নির্ধারিত দাগের ভেতর। যার মন্ত্র ও পদ্ধতিতে পাতারা সবচেয়ে বেশি টেনে আনা যায়, সেই দল পয়েন্ট পায় এবং শেষে বিচারকদের রায়ে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
তান্ত্রিকরা খেলায় ব্যবহার করেন মানুষের মাথার খুলি, লাঠি, জবাফুল, মন্ত্রপাঠ করা বদনাভর্তি পানি, ধুলা, আগরবাতি, মোমবাতি, হরিণের শিং, গাছের শিকড় ও বাকলসহ আরও নানা উপকরণ। এই সব কিছু একত্র করে তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী পাতারাশিকে বশ মানানোর চেষ্টা করেন তারা। মাঠজুড়ে গমগমে পরিবেশে মন্ত্রপাঠ আর দর্শকদের উৎসুক চাহনি ছিল উপভোগ্য।
খেলাটি সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত চলে এবং দর্শনার্থীদের মধ্যে নারী-পুরুষ, শিশু থেকে শুরু করে বয়স্করাও উপভোগ করেন গ্রামীণ এই অভিনব খেলা। আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয় আলিহাট ইউনিয়নের পাঠানপাড়া গ্রামের মোঃ তসলিম উদ্দিনের দলকে। বিজয়ী দলকে পুরস্কার হিসেবে একটি স্মার্ট ফোন দেওয়া হয়।
রানার্সআপ হয় হাকিমপুর উপজেলার বোয়ালদাড় ইউনিয়নের মিয়ার দল। তাদেরকে পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় গামছা, প্লেট ও একটি বই। এছাড়া অংশ নেওয়া বাকি দলগুলোকেও দেওয়া হয় সান্ত্বনা পুরস্কার।
খেলার আয়োজক মোঃ মাসুদ রানা, দেলোয়ার হোসেন, আনাম আলী, শামসুল ও ইউসুফ আলী জানান, দীর্ঘদিন ধরে এ খেলা আয়োজন না করায় তা হারিয়ে যেতে বসেছিল। তাই আবারও এই পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতেই তাদের এ প্রয়াস। তাদের প্রত্যাশা, আগামী বছরগুলোতেও এই আয়োজন আরও বড় পরিসরে হবে।
এমন একটি ঐতিহ্যবাহী খেলাকে কেন্দ্র করে পহেলা বৈশাখের দিন ইটাই গ্রামের সাধারণ মানুষ একদিনের জন্য হলেও ফিরে গেলো গ্রামবাংলার সেই পুরনো দিনগুলোয়। উৎসবমুখর পরিবেশে এই ব্যতিক্রমী খেলাটি যেন হয়ে উঠেছিল আবহমান বাংলার প্রাণের ঐকতানে এক চিরচেনা সুর।