যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক সতর্কবার্তায় জানিয়েছেন, যারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অন্যায্য বাণিজ্য করে তাদের কেউই রেহাই পাবে না। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ভারসাম্যহীন, সেসব দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করা হবে। হোয়াইট হাউস সম্প্রতি চীন থেকে আমদানিকৃত স্মার্টফোন ও কম্পিউটারের ওপর শুল্ক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিলেও ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এটিকে সাময়িক পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেন।
চীন এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও ট্রাম্পকে আহ্বান জানিয়েছে পুরোপুরি শুল্ক বাতিল করতে। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ইতোমধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বড় উৎপাদক দেশ ভিয়েতনাম সফরে গিয়ে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। ভিয়েতনামের একটি সংবাদপত্রে লেখা এক নিবন্ধে তিনি চীন ও ভিয়েতনামকে ঘনিষ্ঠ সমাজতান্ত্রিক প্রতিবেশী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বাণিজ্য ও শুল্ক যুদ্ধের সমালোচনা করে তিনি জানান, এতে কারও লাভ নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি পণ্যের ওপর শুল্ক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের পর চীন ও হংকংয়ের শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। একই সঙ্গে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার আর্থিক বাজারেও মূল্যবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। এমন সময়ে শি জিনপিং এশিয়ার বিভিন্ন বাণিজ্য অংশীদারের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করতে মাঠে নেমেছেন, যাতে চীনা পণ্যের কারণে বিশ্ববাজারে সৃষ্ট উদ্বেগ প্রশমিত হয়।
সিঙ্গাপুরে বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব পড়ায় দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতিতে কিছুটা নমনীয়তা এনেছে। সিঙ্গাপুরের অর্থনীতি রপ্তানিনির্ভর এবং দেশটি চীন ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ নৌবন্দর হওয়ায় এর ওপর এই পরিস্থিতির বড় প্রভাব পড়েছে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশটির প্রবৃদ্ধি কমে ৩.৮ শতাংশে নেমেছে, যেখানে আগের তিন মাসে তা ছিল ৫ শতাংশ।
ট্রাম্প শুরু থেকেই অভিযোগ করে আসছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে বিভিন্ন দেশ অন্যায্যভাবে বাণিজ্যে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তার শুল্ক আরোপ নীতির কারণে অনেক দেশ আলোচনায় বসতে বাধ্য হয়েছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, উচ্চ শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগেই কিছু দেশ সমঝোতার জন্য ৯০ দিনের সময়সীমা পেয়েছে।
তবে শুল্ক আরোপের কারণে ব্যবসায়ীরা দ্বিধায় পড়েছেন। তারা জানেন না, কোন শিল্পখাত কতটা সুরক্ষা পাবে বা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কী হবে। এ কারণে বড় বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তারা অপেক্ষা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কী দাঁড়ায় তা দেখার জন্য।
ট্রাম্প দাবি করেছেন, তার শুল্কনীতি মার্কিন ভোক্তাদের জন্য কম দামে পণ্য নিশ্চিত করবে। তবে অনেক অর্থনীতিবিদ এর উল্টো মত দিচ্ছেন। তাদের মতে, এই শুল্ক নীতির কারণে পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কাই বেশি।
বর্তমানে চীনা পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে চীনও মার্কিন পণ্যের ওপর ৮৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। দুই দেশের মধ্যে ২০২৪ সালে প্রায় ৫৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের বাণিজ্য হয়েছে, যার মধ্যে চীনের রপ্তানি অনেক বেশি। আইএমএফ-এর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় ৪৩ শতাংশই দখলে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন।