বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে দেশ পরিচালিত হলেও রাজনীতির মাঠে উত্তেজনা কমছে না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ পাঠ কর্মসূচি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলমান বাগযুদ্ধ নতুন করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করেছে।
গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জানায়, তারা মঙ্গলবার (আজ) শহীদ মিনারে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ পাঠ করবেন। তারা দাবি করেছেন, ১৯৭২ সালের সংবিধানকে ‘মুজিববাদী সংবিধান’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তা বাতিল করার এবং ‘নাৎসিবাদী আওয়ামী লীগকে’ অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা করার পরিকল্পনা করছেন। এই ঘোষণার পর রাজনৈতিক দলের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
এদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক জরুরি ব্রিফিংয়ে জানায়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা রক্ষা এবং রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য সরকার একটি ঘোষণাপত্র তৈরি করবে। তিনি দাবি করেছেন, এর মাধ্যমে জনগণের ঐক্য সুসংহত করা হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষণা করেছে, তারা সরকারের এই পদক্ষেপের প্রতি সমর্থন জানিয়ে নিজেদের কর্মসূচি বজায় রাখবে, তবে ঘোষণাপত্র সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট দলগুলোর মধ্যে তীব্র বিতর্ক চলছে। বিএনপির নেতা মির্জা আব্বাস ১৯৭২ সালের সংবিধান সংশোধন করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন, যদিও জামায়াতে ইসলামী তার সমর্থন দিয়েছে এবং ছাত্রদের আন্দোলনকে নৈতিকভাবে সমর্থন জানিয়েছে। অন্যদিকে, গণতন্ত্র মঞ্চের সাইফুল হক মনে করেন, এ ধরনের উদ্যোগ ঐক্য রক্ষার চেয়ে বিভাজন সৃষ্টি করবে।
এদিকে, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বাগযুদ্ধ চলছেই। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জামায়াতের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন। এর প্রতিক্রিয়ায় জামায়াতে ইসলামী রিজভীর বক্তব্যকে বিভ্রান্তিকর এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে নিন্দা জানিয়েছে। জামায়াত দাবি করেছে, তারা ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে রাজনীতি করে এবং তাদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়।
এই উত্তেজনার মধ্যে, নির্বাচন ও ভোটারদের বয়স নিয়ে নতুন বিতর্ক উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ভোটার হওয়ার বয়স ১৮ থেকে কমিয়ে ১৭ বছর করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একে নির্বাচনী কমিশনের বিষয় হিসেবে মন্তব্য করে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র এবং ছাত্রদের আন্দোলন নতুন বিভাজন সৃষ্টি করবে। সরকারের উচিত, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যে পৌঁছানো। ৫ আগস্টের পর পুনর্গঠিত ক্ষমতা কাঠামোতে সবার সমান সুযোগ না পাওয়া, পরস্পরের বাগযুদ্ধের কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে, দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে আরও বিভক্তি ও উত্তেজনা তৈরি হতে পারে, বিশেষত সংবিধান সংশোধন এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে চলমান বিতর্কের প্রেক্ষাপটে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।