প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৫, ১৮:৪৮
নোয়াখালীর উপকূলীয় জেলা নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্ট অস্বাভাবিক জোয়ারের তান্ডবে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা। বিশেষ করে হাতিয়ার মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর ও চরএলাহী ইউনিয়নের কিছু অংশসহ নিঝুম দ্বীপের প্রধান সড়ক ও নামার বাজার এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। প্রবল জোয়ারের কারণে শতাধিক বাড়িঘর নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে এবং বহু পরিবার আশ্রয় পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে। নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করায় উপজেলার টাংকির ঘাট ও চেয়ারম্যানঘাট এলাকায় অর্ধশতাধিক বাড়িঘর সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, জোয়ারের পানিতে শুধু ঘরবাড়ি নয়, ফসলি জমি ও সড়কপথও প্লাবিত হয়েছে, ফলে জনজীবনে ব্যাপক অসুবিধা দেখা দিয়েছে। নিঝুম দ্বীপের নামার বাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো পানির নিচে ডুবে গেছে এবং পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এছাড়া উপজেলার নলচিরা, সোনাদিয়া ও সুখচর ইউনিয়নের গ্রামগুলোও জোয়ার প্লাবনের আওতায় পড়েছে। এলাকার বাসিন্দারা হুমকির মুখে পড়েছে নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যানের হরিণসহ বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ।
অপরদিকে জেলা শহরের মাইজদী এলাকার কিছু স্থান এখনও জলাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে, যা ড্রেন ও খালের ময়লা আবর্জনার কারণে জল নিষ্কাশনে ব্যর্থতার ফলাফল বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন। নোয়াখালী আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ায় দমকা হাওয়া ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার বিভিন্ন স্থানে ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি অবস্থান থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন জানান, সুখচর ও সোনাদিয়া ইউনিয়নের কিছু অংশ ও নিঝুম দ্বীপের বেশ কিছু গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে গেছে, কোথাও ২-৩ ফুট পানি দেখা যাচ্ছে। সুখচরের একটি বেড়িবাঁধ গতকাল ভেঙে যাওয়ায় প্লাবন বৃদ্ধি পেয়েছে। নদী ভাঙনের কারণে অনেক মানুষ বাড়িঘর ও দোকানঘর সরিয়ে নিয়েছে। নদীর অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ায় বিকেল থেকে কয়েকটি রুটে নৌকা চলাচল শুরু হয়েছে।
বর্তমানে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা ও ত্রাণসামগ্রী সরবরাহের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, যাতে প্লাবিত এলাকায় থাকা মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়। প্রশাসন ও স্থানীয়রা একসঙ্গে কাজ করে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। নদী ভাঙন ও প্লাবনজনিত এই দুর্যোগ মোকাবিলায় জনগণের সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানানো হয়েছে।