প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৫, ১২:৩৬
নওগাঁর আত্রাই উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম গোয়ালবাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে বিরাজ করছে আতঙ্ক ও শূন্যতা। গত এপ্রিল মাসে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার রনশিবাড়ি হাটে গোয়ালবাড়ির দুই বাসিন্দা নিহত হওয়ার পর সেই ঘটনায় মামলা হওয়ায় গোয়ালবাড়ি গ্রামের ১২০০ অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এরপর থেকেই গ্রামের পুরুষদের একটি বড় অংশ বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে আছেন।
স্থানীয়রা জানান, ৪ এপ্রিল রনশিবাড়ি হাটে মাছ ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাককে মাদকাসক্ত আমিরুল ইসলাম ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। উত্তেজিত জনতা পরে আমিরুলকে পিটিয়ে হত্যা করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে থাকলেও উত্তেজিত জনতার ভিড় ঠেকাতে ব্যর্থ হয়। এই ঘটনার জেরে পুলিশ সরকারি কাজে বাধা ও আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে হত্যার অভিযোগে গোয়ালবাড়ি গ্রামের বিপুলসংখ্যক লোককে আসামি করে মামলা দায়ের করে।
পুলিশ ও র্যাব অভিযানে এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে গ্রামের শত শত পুরুষ সদস্য এবং শিক্ষার্থীরা পলাতক। দোকানপাট বন্ধ, মাঠে ফসল পড়ে আছে, কেউ তুলতে পারছে না। এ অবস্থায় পুরো গ্রাম কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। এমনকি এইচএসসি পরীক্ষার্থী এক কিশোরও গ্রেপ্তার হওয়ায় পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি বলে অভিযোগ করেছেন তার পরিবার।
গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেন, আসামির সংখ্যা অজ্ঞাত হওয়ায় পুলিশ বিভিন্ন সময়ে শুধু গোয়ালবাড়িতেই অভিযান চালাচ্ছে। একটি দালাল চক্র মামলা থেকে নাম কাটাতে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। গ্রামবাসীদের দাবি, যারা প্রকৃত অপরাধী তাদের গ্রেপ্তার করা হোক, নিরীহদের যেন হয়রানি না করা হয়।
স্থানীয় নেতাকর্মী ও শিক্ষকেরাও বলেছেন, সেদিন হাটে ১২-১৫টি গ্রামের মানুষ ছিল, শুধু গোয়ালবাড়ি নয়। অথচ শুধুমাত্র এই একটি গ্রামের পুরুষদের ওপর দায় চাপানো হয়েছে। এতে গোটা এলাকায় চাপা ক্ষোভ ও উদ্বেগ বিরাজ করছে।
পুলিশ সুপার আশ্বস্ত করেছেন, নিরীহ কাউকে হয়রানি করা হবে না। জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। তবে মাঠের বাস্তবতা বলছে, আতঙ্ক এখনো কাটেনি। স্কুল বন্ধ, চাষাবাদ থেমে গেছে, গ্রামের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা দিন দিন বাড়ছে।