প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৫, ১২:২০
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বিশ্রামপুর এলাকায় এক পিতা তার সন্তান আত্মহত্যার শোকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। নিহত নুর হোসেন (৪৫) ভানোর ইউনিয়নের বিশ্রামপুর (দক্ষিণ পাড়া) গ্রামের বাসিন্দা। শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার পর তিনি নিজ শোয়ান ঘরের পাশের ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
নুর হোসেনের স্ত্রী মনুয়ারা বেগম জানান, রাতে স্বামীকে ঘরে না পেয়ে খোঁজাখুঁজির পর গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় তার দেহ দেখতে পান। ছোট ভাই বেলাল হোসেন জানান, নুর হোসেনের একমাত্র ছেলে গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা করার পর থেকেই তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। পরিবারের চেষ্টা ছিল তাকে চিকিৎসার জন্য রংপুর নিয়ে যাওয়ার, কিন্তু তার আগেই এমন ঘটনা ঘটে।
বেলাল হোসেন জানান, নিহত নুর হোসেন দিনমজুরী করে পরিবারের ভরণ-পোষণ করতেন। তার চিকিৎসার জন্য এলাকার মানুষ সহযোগিতা করেছিলেন। তারা শুক্রবার মসজিদে নামাজের পর সবাই মিলে তার জন্য দোয়া করেছিলেন। তবে মানসিক সমস্যা নিয়ে তিনি নিরাশ্রয় থাকায় চিকিৎসার সুযোগ পেতেন না।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সন্তানের মৃত্যুর শোকে মানসিক ভারসাম্য হারানো নুর হোসেনের মানসিক অবস্থার অবনতি ঘটছিল। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। এই শোকে তার উপর বিরাট মানসিক চাপ তৈরি হয়েছিল, যা তার জন্য নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি (তদন্ত) দিবাকর অধিকারী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তারা রাতে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেন। পরিবারের কাছে থেকে কোনো অভিযোগ না আসায় একটি ইউডি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। লাশ দাফনের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
স্থানীয়দের সহযোগিতায় পারিবারিক সদস্যরা শোকাকুল অবস্থায় নিহতের দাফন সম্পন্ন করেছেন। তারা সবাই পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন এবং বলছেন, মানসিক রোগীদের চিকিৎসার ব্যাপারে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা দরকার, যাতে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধ করা যায়।
মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সেবা ও সঠিক সময়ে চিকিৎসা পাওয়ার গুরুত্ব এলাকায় অনেকেই অনুধাবন করার চেষ্টা করছেন। এই ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করলো, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক অবহেলা কতটা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। তাই প্রত্যেকেরই উচিত পরিবারের পাশে থেকে মানসিক সমস্যায় ভুগা সদস্যদের সঠিক চিকিৎসা ও মনোযোগ দেওয়া।