প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৫, ১৮:৯
বরিশালের বানারীপাড়ায় খেজুরবাড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে উচ্ছেদের শিকার ৩১টি পরিবারের মধ্যে ২৭টি পরিবার ফের ঘর ও জমির আশায় আবেদন করেছেন নবাগত সহকারী কমিশনার (ভূমি) আহসান হাফিজের কাছে। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর বৈধ দলিল না থাকার অভিযোগে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে বসবাসরত এই পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করে তালা লাগিয়ে দেয় প্রশাসন।
এদের অভিযোগ, পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে তালাবদ্ধ করা হয় তাদের ঘর, যার ভেতরে রয়ে যায় ব্যক্তিগত মালপত্র ও খাবার। তারপর থেকেই তারা আশ্রয়ণের ঘরের সামনে পলিথিন ও খড় দিয়ে তৈরি ছাউনির নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। শীত, বৃষ্টি, ঝড় কিংবা প্রখর রোদ—সবই যেন প্রতিদিনের সহচর হয়ে উঠেছে তাদের জন্য।
এদের কেউ কেউ বারান্দায় আবার কেউ খোলা জায়গায় বসবাস করছেন, যেখানে নেই নিরাপত্তা, নেই খাদ্য, নেই স্বাস্থ্যসেবা। আবেদনকারীদের মধ্যে রয়েছেন শ্রমজীবী নারী-পুরুষ থেকে শুরু করে দিনমজুর পর্যন্ত নানা শ্রেণির হতদরিদ্র মানুষ। এদের একজন কান্নাজড়ানো কণ্ঠে বলেন, আমরা তো অশিক্ষিত, যখন সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে ঘরের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, আমরা ভেবেছিলাম সেটিই আমাদের মালিকানা দলিল।
প্রশাসন সেই কাগজকে অগ্রহণযোগ্য বলায় এখন আবার নতুন করে আবেদন করতে হচ্ছে। সহকারী কমিশনার আহসান হাফিজ জানান, আবেদনগুলো গ্রহণ করে যাচাই-বাছাই করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ পাঠানো হবে এবং কেউ যেন মানবেতর অবস্থায় না থাকেন, সে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে। এর আগে ২০২৩ সালের মার্চে বরিশালের বানারীপাড়াকে ‘ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত’ ঘোষণা করেছিল তৎকালীন সরকার, অথচ সেই ঘোষণার পর দেড় বছরের মধ্যে সরকারি আশ্রয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারাল এই পরিবারগুলো।
উপজেলা প্রশাসনের দাবি, তারা বহুবার ঘর ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেও কেউ মানেনি বলেই তালাবদ্ধ করা হয়। তবে এলাকাবাসী ও সচেতন মহল মনে করছেন, দীর্ঘদিন বসবাসকারী মানুষদের হঠাৎ করে উচ্ছেদ না করে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা উচিত ছিল। বর্তমানে আশ্রয়ের আবেদনকারী ২৭টি পরিবারের জীবনযাপন যেভাবে করুণ বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আছে, তাতে তাদের পুনর্বাসন নিশ্চিত না করলে তারা সত্যিই পথে বসে যাবে। সরকারের সদিচ্ছাই পারে এদের আবারও মাথা গোঁজার ঠাঁই ফিরিয়ে দিতে।