প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৫, ১৬:১২
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে মাদক ব্যবসা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম ও পাড়া-মহল্লায় ইয়াবা, হিরোইন, ফেনসিডিল, ড্যান্ডি গামসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। মাদকের ছোবলে স্থানীয় যুব সমাজ ও শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষত স্কুল-কলেজের পড়ুয়ারা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে, যা ভবিষ্যতের জন্য বড় ধরনের সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে। অনেক মাদক কারবারি এখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টির বাইরে থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
সরাইলে মাদক ব্যবসার একটি তিন ধাপে পদ্ধতি কাজ করছে। সীমান্ত পার থেকে আসা মাদক প্রথমে শহরের এজেন্টদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। এরপর তারা খুচরা বিক্রেতাদের মাধ্যমে গ্রামে পৌঁছে দেয়। দরিদ্র পরিবারের নারী ও শিশুদের মাদক পরিবহন, বিক্রয় এবং অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা সামাজিক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বরোড এলাকাকে মাদকের রাজ্য হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে, কারণ এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদকের চালান পৌঁছে যায়।
সরাইলে মাদক ও জুয়ার কারণে বাড়ছে অপরাধের মাত্রা। চুরি, হানাহানি এবং পারিবারিক অশান্তির ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। অনেক পরিবারে টাকা না দেওয়ার কারণে অভিভাবকদের প্রতি সহিংসতা বাড়ছে। পুলিশ কিছু অভিযান করলেও মাদক ব্যবসায়ীরা জামিন নিয়ে আবারও মাদক চক্রে প্রবেশ করছে। ড্যান্ডি গাম নামক আঠালো পদার্থ মাদক হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে, যা মানসিক বিকার ঘটায়। দুই বছরের বেশি সময় ড্যান্ডি গ্রহণ করলে মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
সরাইল উপজেলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আরিফুল ইসলাম সুমন জানান, মাদক ব্যবসা এককভাবে হয় না। অনেক রাঘব বোয়াল ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এর সঙ্গে জড়িত। রাজনৈতিক ছত্রছায়া এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাঝে থাকা কিছু সদস্যের সহযোগিতায় মাদক চক্র বিস্তার পাচ্ছে। তাই পুলিশি অভিযান ছাড়াও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি। মাদক বিরোধী সচেতনতা বাড়াতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রশাসন এবং সমাজের সব স্তরের সহযোগিতা প্রয়োজন।
সরাইল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী মো. নুরুজ্জামান লস্কর তপু বলেন, গ্রামাঞ্চলেও মাদক চরম হারে প্রবেশ করেছে। প্রশাসনকে আরও সক্রিয় হয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অনেক মাদক ব্যবসায়ী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নাম ব্যবহার করে আসল কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তাই সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মাদক নির্মূলে কাজ করতে হবে।
খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মামুন রহমান বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। সরাইল থানার ওসি মো. রফিকুল হাসান বলেন, মাদকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে এবং মাদক সেবীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা আইন শৃঙ্খলা সভায় বক্তারা বলেন, মাদকবিরোধী আন্দোলন ও পুলিশি অভিযান বাড়াতে হবে। নারীদের মাধ্যমে মাদক পরিবহন ও বিক্রি বাড়ছে, যা বিশেষ উদ্বেগের বিষয়। সামাজিক আন্দোলন ও পারিবারিক সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে যুব সমাজকে মাদকের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসাইন মাদকবিরোধী প্রচারণা অব্যাহত রাখার কথা জানান এবং সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
সরাইলের মাদক সমস্যার সমাধানে প্রশাসনের পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি। মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনতে এবং যুব সমাজকে রক্ষা করতে সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে হবে।