প্রকাশ: ৫ আগস্ট ২০২১, ২১:৪০
পটুয়াখালীর কুয়াকাটাসহ সমুদ্র উপকুলের কৃষি জমি লবনাক্ত পানির কবল থেকে রক্ষা,বর্ষা মওসুমে সুষ্ঠুভাবে পানি নিস্কাশন ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের কবল থেকে জান-মাল রক্ষার জন্য বেড়িবাঁধের উপর নির্মান করা জলকপাটগুলো এখন আর কৃষকদের কাজে আসছে না।
এক শ্রেনির স্বার্থন্বেসী প্রভাবশালী মহল মাছ চাষের উদ্দেশ্যে শীত মওসুমে সাগরের লবনাক্ত পানি উত্তোলন করে এবং বর্ষা মওসুমে জলকপাট আটকিয়ে রাখার কারনে হাজার হাজার একর কৃষি জমি পানির নিচে তলিয়ে থাকে। বর্ষা মৌসুমে জমি চাষাবাদ তো দূরের কথা গবাদিপশুর খাবারেও সংকট দেখা দেয়। এসবের প্রতিকারের জন্য প্রতিবাদ করলে উল্টো মিথ্যা মামলায় জড়াতে হচ্ছে কৃষকদের।
পটুয়াখালীর কুয়াকাটাসহ উপকুলীয় এলকায় ষাটের দশকের প্রথম দিকে ৯টি পোল্ডারে ৩৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মান করা হয়। ওই দশকের মাঝামাঝি সময়ে ৪৯টি ড্রেনেজ এবং ৫৩টি ফ্লাশিং স্লুইজ বা জলকপাট নির্মান করা হয়। প্রত্যেকটি জলকপাট সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রনের জন্য একজন করে খালাসি নিয়োগ দেয়া হয়। এলাকার কৃষকদের সুবিধার জন্য তারা পানি উঠা-নামা করাতো। প্রয়োজনে গেট বন্ধ রাখতো। আবার প্রয়োজন হলে খুলে দিতো।
৬৯’র পর থেকে নতুন করে খালাসী নিয়োগ বন্ধ করে দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। অপরদিকে নিয়োগকৃত খালাসীরা অবসরে যাবার পর আর কোনো খালাসীর নিয়োগ দেয়নি। ফলে জলকপাটগুলো হয়ে যায় অরক্ষিত। এ সুযোগে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল দখল করে নেয় জলকপাটগুলো।
মহিপুর থানাধীন ৪৭/৪৮ নং পোল্ডারে প্রায় ৭টি জলকপাট রয়েছে। এসব জলকপাটগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। জলকপাট নিয়ন্ত্রন করে এক শ্রেনীর প্রভাবশালীরা মাছ শিকার করছে। চলতি মৌসুমে অতিবর্ষন ও অমাবশ্যা পুর্নিমার জো’য়ের অতিরিক্ত পানি প্রবেশ করে কৃষকদের বীজতলাসহ ফসলি জমি তলিয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে, জলকপাটগুলো দিয়ে পানি উঠানো কিংবা নামানো হচ্ছে শুধুমাত্র মাছ শিকারীদের স্বার্থে।
কৃষকদের স্বার্থে এসব জলকপাট ব্যবহার করা হয় না। যার ফলে যখন পানি প্রয়োজন তখন পানি পাওয়া যায় না। আবার যখন পানির প্রয়োজন নেই তখন পানিতে তলিয়ে থাকে কৃষি ক্ষেত। মহিপুর থানাধীন ৪টি ইউনিয়ন ও কুয়াকাটা পৌর এলাকার শত শত কৃষকরা জলকপাটের অপব্যবহারের কারনে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
একই চিত্র উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের নীজকাটা গ্রামে। সেখানে ৮ ব্যান্ডের স্লুইজের ওপর ১৭টি গ্রামের মানুষ নির্ভরশীল। বর্তমানে ওই গ্রামগুলোর ৪ হাজার একর জমি চাষাবাদের হুমকীর মুখে। চাকামইয়া ইউনিয়নের কাঠালপাড়ার ৪ ব্যান্ডের স্লুইজ গেট সম্পূর্ন খোলা রয়েছে। ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই খালের দুপাড়ে রয়েছে চাকামইয়া, কড়ইবাড়িয়া ও আড়পাঙ্গাশিয়া এই তিনটি ইউনিয়নের মানুষে দুভোগের সীমা নেই।
সম্প্রতি সরকারি খালের দখল নিয়ে দু’পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ৩২ জন আহত হয়েছে । এদের মধ্যে আট জনকে গুরুতর অবস্থায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করেছে। উপজেলা কৃষি অফিসার এআর এম সাইফুল্লাহ বলেন, ম্লুইজ গেট নিয়ন্ত্রন কমিটির সাথে কৃষি বিভাগকে জড়িয়ে রাখলে আমরা প্রান্তিক কৃষকদের উপকার করতে পারতাম। এ স্লুইজ কারা নিয়ন্ত্রন করে তা আমরা কিছুই জানি না
এ ব্যাপারে কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসডি শওকত হোসেন মেহরাজ এ প্রতিনিধিকে জানান,এ কুয়াকাটাসহ উপজেলার সকল স্লুইজ গেট কমিটির প্রধান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সদস্য সচিব পানি উন্নয়ন বোর্ড। এদের সাথে স্থানীয় কৃষক ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গদের নিয়ে নয় সদস্য বিশিষ্ট স্লুইজ গেট নিয়ন্ত্রন কমিঠি রয়েছে। স্লুইজগেট গুলোর অপব্যবহার সরজমিনে খতিয়ে দেখে ব্যাবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।