মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশিদ্রোন ইউনিয়নের টিকরিয়া কপালিপাড়া গ্রামে একসময় ধানচাষের জন্য ব্যবহৃত বিশাল জমিতে এখন দুলছে সম্ভাবনার ঢেঁড়শ। স্থানীয় চাষিদের উদ্যোগ ও কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে এলাকায় ঢেঁড়শ চাষে এসেছে বিপ্লব। ধান কাটার পর পতিত জমিকে কাজে লাগিয়ে লাভজনক সবজি চাষে সফল হয়েছেন গ্রামের কৃষকরা।
এই গ্রামে প্রথম ঢেঁড়শ চাষ শুরু করেন চাষি বিষু রঞ্জন কপালি। তার সফলতা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে একই গ্রামের চাষি অমর কপালিসহ অনেকেই ঢেঁড়শ চাষে ঝুঁকেছেন। অমর কপালি জানান, ধান কাটা শেষে জমি ফেলে না রেখে ঢেঁড়শ রোপণ করায় ফলন ভালো হয়েছে। এখন পর্যন্ত যা বিক্রি করেছেন, তা থেকে খরচ বাদেও ভালো লাভ হয়েছে। তিনি আশা করছেন, চলমান ফলনের ভিত্তিতে দ্বিগুণ লাভ করবেন। পাইকারি বাজারে কেজি প্রতি ২৫ টাকায় বিক্রি করছেন ঢেঁড়শ, যেটি ব্যবসায়ীরা খুচরা বাজারে দ্বিগুণ বা তিনগুণ দামে বিক্রি করছেন।
অপর চাষি বিষু কপালি জানান, তিনি দুই কিয়ার জমিতে ঢেঁড়শ চাষ করেছেন। ২০ হাজার টাকা খরচ করে প্রত্যেক কিয়ারে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা লাভের আশা করছেন। তিনি বলেন, চারা রোপণের ৪৫-৪৬ দিন পর থেকেই ফলন আসতে শুরু করেছে এবং একদিন পরপর প্রায় ১৫০-২০০ কেজি ঢেঁড়শ তোলা হচ্ছে। বর্তমানে কেজি প্রতি পাইকারি দাম ২৫-২৮ টাকা হলেও শুরুতে ৯০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে।
এ এলাকার কৃষকদের সহযোগিতা করছেন উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী কর্মকর্তা মো. মাসুকুর রহমান। তিনি জানান, ঢেঁড়শের যে জাতটি চাষ হচ্ছে সেটি ‘দুরন্ত’ নামে নতুন সম্প্রসারণাধীন জাত। কম খরচ, কম সময়ে ফলন এবং চাহিদা থাকায় কৃষকেরা এখন ব্যাপকভাবে এ জাত চাষে আগ্রহী।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আলাউদ্দিন জানান, কপালিপাড়া গ্রাম এখন ঢেঁড়শ চাষের জন্য পরিচিতি পেয়েছে। এলাকার প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে কৃষকেরা ঢেঁড়শ আবাদ করছেন। এই সবজি চাষে খরচ কম এবং ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকেরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। একজন কৃষক বিঘাপ্রতি ৭০-৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ করছেন।
তিনি আরও জানান, ঢেঁড়শ একটি পুষ্টিকর ও জনপ্রিয় সবজি। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি, সি, আয়োডিন, ভিটামিন এ এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান। এটি গলাফোলা প্রতিরোধ ও হজম শক্তি বাড়াতে সহায়ক। ফলে এর বাজার চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। চাষিরা জানিয়েছেন, ঢেঁড়শ গাছ তিন থেকে চার মাস ফলন দেয়, তাই তারা ধান লাগানোর আগ পর্যন্ত এ চাষ চালিয়ে যাবেন।
অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জনের পথ খুলে দিয়েছে ঢেঁড়শ চাষ। কৃষকদের স্বপ্ন এখন মাঠেই ফলছে সবুজ সবজি হয়ে।