হাওরের প্রান্তিক উপজেলা আজমিরীগঞ্জে এখন বোরো ধান কাটার ব্যস্ত মৌসুম। কাকডাকা ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষাণীরা। চারিদিকে সোনালী ধানের সমারোহ। মাঠে মাঠে চলছে ধান কাটার উৎসবমুখর পরিবেশ। কৃষকের মুখে ফুটেছে পরিশ্রমের তৃপ্তির হাসি।
পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের কবিতার মতোই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে আজমিরীগঞ্জের মাঠে। “সবুজ পাতার পরে, সোনার ছড়ায় হেমন্তরানী” — এই চিত্র যেন বাস্তব হয়ে ধরা দিয়েছে হাওরের ধানক্ষেতে। সোনালী ধানের সৌরভে ভরে গেছে চারদিক। কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন ধান কেটে, শুকিয়ে, মাড়াই করে ঘরে তুলতে।
এই ব্যস্ততায় পিছিয়ে নেই কৃষাণীরাও। তারা বাড়ির আঙিনায় গোবর-মাটি দিয়ে ধান শুকানোর জায়গা প্রস্তুত করছেন, ধান সিদ্ধ করছেন, আবার রোদে শোকাচ্ছেন। পরিবারের ছোট ছেলেমেয়েরাও এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে উঠেছে। ধান কাটা যেন পরিণত হয়েছে একটি উৎসবে।
আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় এবার বোরোধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া, কৃষি বিভাগের তদারকি ও প্রশিক্ষণ এবং পর্যাপ্ত সার-বীজ সরবরাহের কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে ধান উৎপাদন হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ লুৎফে আল মঈজ জানান, “এ বছর আমাদের রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪৬২৫ হেক্টর, কিন্তু অর্জন হয়েছে ১৪৬৩০ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হেক্টর বেশি। ফলন ভালো হয়েছে, এবং বাজারে ধানের দামও সন্তোষজনক।”
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা কেউ হাতে কাচি নিয়ে ধান কাটছেন, আবার কেউ ধান কাটার মেশিন ব্যবহার করছেন। কাটার পর জমিতেই ধান শুকিয়ে, তারপর মাড়াইয়ের কাজ করছেন। ধান ঘরে তুলতে কৃষাণীরাও নিজেদের আনন্দে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
কৃষকেরা জানান, এবারের বোরো মৌসুমে এমন ফলনে তারা দারুণ খুশি। ফলন ভালো হওয়ায় তারা আশা করছেন, ঘর ভরে উঠবে চালে, পিঠা-পায়েস আর নতুন জামার আনন্দে মুখরিত হবে পরিবার। নতুন জামাই এলে সেই আনন্দ যেন আরও দ্বিগুণ হয়ে যাবে।
বাম্পার ফলনের কারণে এই অঞ্চলের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। কৃষকের কষ্ট ও পরিশ্রম এবার যেন সার্থক হতে চলেছে।