মৌলভীবাজার জেলায় চলতি বোরো মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪০ হেক্টর বেশি জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার জেলার হাওরাঞ্চলসহ সাত উপজেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে, যা কৃষকদের মধ্যে আনন্দ ও আশার সঞ্চার করেছে। তবে ধান উৎপাদনে ব্যয় বাড়ায় ন্যায্যমূল্য নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় রয়েছেন চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলার হাওর ও হাওরের বাইরের এলাকায় বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬২ হাজার ১০০ হেক্টর জমি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৬২ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪০ হেক্টর বেশি। এতে এবার ২ লাখ ৪৮ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের আশা করছে কৃষি বিভাগ।
সরেজমিনে বড়লেখা উপজেলার হাকালুকি, রাজনগরের কাউয়াদীঘি, শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মাঠে চলছে উৎসবের আমেজ। প্রান্তিক কৃষকরা বলছেন, এমন ফলন দীর্ঘদিন পর দেখেছেন। হাইল হাওর পাড়ের নওয়াগাঁও গ্রামের কৃষক মো. আজাদ মিয়া বলেন, "২৭ একর জমিতে ব্রি-৮৮ জাতের ধান চাষ করেছি। ফলন খুব ভালো হয়েছে, প্রতি একরে ৫০-৫৫ মন ধান পাবো আশা করছি।" একই গ্রামের কৃষক ফজলু মিয়াও জানান, তার ১০ একর জমিতে বোরো ধানের ফলন আশানুরূপ হয়েছে।
হাকালুকি হাওরের কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, “এবার ৪ একর জমিতে চাষ করেছি, ফলন খুব ভালো হয়েছে। আশা করছি ২০০ মন ধান পাবো।” আলীনগরের কৃষক মো. চুনু মিয়া বলেন, “বর্গা চাষ করেছি, ফলনে সন্তুষ্ট। আগের বছরের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে যাবে।”
এছাড়া ধান কাটা শ্রমিকদেরও দেখা গেছে ব্যস্ত সময় পার করতে। খাইছড়া ও জাগছড়া চা বাগানের অস্থায়ী শ্রমিকরা জানান, মৌসুমে ধান কেটে তারা অতিরিক্ত আয় করেন। গত বছরের তুলনায় এবার মজুরি বেড়েছে, এখন দিনে ৪৫০ টাকা করে পাচ্ছেন, যা আগের বছর ছিল ৩৫০ টাকা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দিন জানান, ব্রি-৯২, ব্রি-৮৮, বি-৯০ ও বি-২৮ জাতের ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ব্রি-৯২ জাতটি হাওর অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত উপযোগী হয়েছে, ফলে ফলন আশানুরূপ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে পুরো জেলায় ভালো ফলন পাওয়া যাবে।
তবে কৃষকদের একাংশের শঙ্কা, যদি ধান কাটার আগেই শিলাবৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে, তাহলে তাদের ফলনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তারা সরকারের কাছে ধান সংগ্রহের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।