প্রকাশ: ৯ জুলাই ২০২৫, ১১:২৭
গত বছর বাংলাদেশে ছাত্রদের নেতৃত্বে হওয়া বিক্ষোভে প্রাণঘাতী দমন অভিযান চালানো হয়েছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি অনুমোদনে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির অনুসন্ধানী ইউনিট বিবিসি আই ইনভেস্টিগেশন প্রকাশিত এক ফাঁস হওয়া ফোনালাপের অডিওতে শেখ হাসিনাকে “যেখানেই বিক্ষোভকারী পাওয়া যাবে, গুলি করা হবে” বলে নির্দেশ দিতে শোনা যায়। এই অডিওটি এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে পালিয়ে আছেন এবং অনুপস্থিত অবস্থায় বিচার চলছে। জাতিসংঘের তদন্তকারীরা ওই বিক্ষোভে প্রায় ১৪০০ জনের মৃত্যুর তথ্য প্রকাশ করেছেন। যদিও আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা এ অভিযোগ সবসময় অস্বীকার করে আসছেন।
ফোনালাপটি ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই রেকর্ড হয়েছে, যেখানে শেখ হাসিনা একজন শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে কথোপকথনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেন। ব্রিটিশ ফরেনসিক অডিও বিশেষজ্ঞ দল ও বাংলাদেশ পুলিশের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট অডিওটির সত্যতা নিশ্চিত করেছে। ধারণা করা হয়, এটি বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের রেকর্ডিং।
গত বছরের জুলাই মাসে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে ছিল। আন্দোলনটি দ্রুত বড় আকার নেয় এবং ৫ আগস্ট পুলিশি গুলিতে অন্তত ৫২ জন নিহত হন। বিবিসির অনুসন্ধানে দেখা যায়, যাত্রাবাড়ী থানার সামনে অন্তত ৩০ মিনিট ধরে নির্বিচার গুলির ঘটনা ঘটে এবং সেসময় সেনাবাহিনী এলাকাটি ত্যাগ করেছিল। নিহত আন্দোলনকারীদের একটি মোবাইল ফোন থেকে নেওয়া ভিডিওতে সেই মর্মান্তিক ঘটনার দৃশ্য ধরা পড়েছে।
বাংলাদেশ পুলিশ স্বীকার করেছে, ওই সময় কিছু সদস্য অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছিলেন এবং অপেশাদার আচরণ করেছিল। তদন্ত চলাকালে বিবিসির কাছে বিভিন্ন ভিডিও, ছবি এবং ড্রোন ফুটেজ এসেছে, যা ঘটনাগুলোর প্রমাণ বহন করে। গুলির ফলে আহতদের উদ্ধার করতে আন্দোলনকারীরা প্রচেষ্টা চালিয়েছিল, তবে পরিস্থিতি দ্রুত হাতের বাইরে চলে গিয়েছিল।
জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা থাকলেও বিবিসির অনুসন্ধান পরিস্থিতির অনেক অজানা দিক সামনে এনেছে। সেই সঙ্গে শেখ হাসিনার ফোনালাপে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া তথ্য আন্তর্জাতিক বিচারিক প্রক্রিয়ায় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হচ্ছে। বর্তমানে ভারতের আশ্রয়ে থাকা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিচার চলছে, তবে ভারত সরকার তাকে প্রত্যর্পণ করেনি। এই ঘটনাটি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে সংবেদনশীল এবং বিতর্কিত অধ্যায় হিসেবে রয়ে গেছে।
সূত্রঃ বিবিসি এর প্রতিবেদন ।