তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চারটি কমিশন তাদের সংস্কার প্রস্তাব জমা দিয়েছে। বুধবার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া এসব প্রতিবেদনে সংবিধান, পুলিশ, নির্বাচন এবং দুর্নীতি দমন খাতে পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে। সংবিধান সংস্কার কমিশন জাতীয় সংসদ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করার প্রস্তাব করেছে। নিম্নকক্ষে ৪০০ আসনের মধ্যে ১০০টি নারী আসন এবং উচ্চকক্ষে ১০৫টি আসনের সুপারিশ করা হয়েছে। আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন করার প্রস্তাবও প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত।
পুলিশ সংস্কার কমিশন পুলিশকে প্রাণঘাতী অস্ত্র না দেওয়া এবং বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখার প্রস্তাব করেছে। ২০২৩ সালের বিক্ষোভে পুলিশের প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার ও প্রাণহানির ঘটনার পর এই সুপারিশ এসেছে। পুলিশ নিয়োগ, পদোন্নতি এবং নজরদারির ক্ষেত্রে পরিবর্তনের প্রস্তাবও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সংস্কারে রাষ্ট্রপতির প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। নির্বাচনি আইন পরিবর্তন এবং গণভোট ব্যবস্থা পুনরায় চালুর কথাও প্রতিবেদনে এসেছে। নির্বাচনব্যবস্থার কঠোর তদারকির পাশাপাশি সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারে নিয়োগ প্রক্রিয়া ও আইনি ক্ষমতা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। কমিশনটি উচ্চপর্যায়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে চায়। এ ক্ষেত্রে এনবিআর, বিএফআইইউ, সিআইডি এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসের সঙ্গে সমন্বয় বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর সংস্কার পরিকল্পনা হিসেবে ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়। বুধবার চারটি কমিশন তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে। জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন নির্ধারিত সময়ে রিপোর্ট জমা দেবে বলে জানানো হয়েছে।
সংবিধান সংশোধনে ক্ষমতার ভারসাম্য আনার প্রস্তাবগুলো বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থা কার্যকর হলে একনায়কতন্ত্র ঠেকানো সম্ভব হবে। পাশাপাশি নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের জন্য সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হওয়ার প্রস্তাব যথাযথ পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো নিয়ে সরকার রাজনৈতিক দল, শিক্ষার্থী, এবং নাগরিক সমাজের সঙ্গে আলোচনা করবে। পরে সাত দিনব্যাপী পরামর্শ সভার মাধ্যমে সংস্কারের চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করা হবে।
এই উদ্যোগ রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রধান উপদেষ্টা এই সুপারিশগুলোর ভিত্তিতে সমন্বিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।