মৌলভীবাজারে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পৌর বাস টার্মিনালটি উদ্বোধনের ১৫ বছর পরও অব্যবহৃত পড়ে আছে। ২০১০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হলেও এর পরপরই বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে টার্মিনালটি এখন অযত্ন-অবহেলায় জরাজীর্ণ অবস্থায় পরিণত হয়েছে।
শহর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে, ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে যুগিডর এলাকায় নির্মিত এই বাস টার্মিনালটির আশপাশে এখন জনশূন্যতা, নীরবতা ও বিরান পরিবেশ বিরাজ করছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবনের দেয়ালে ফাটল, ভাঙা টাইলস, খোলা কাচের দরজা, অপ্রয়োজনীয় নির্মাণসামগ্রী, পশু বিচরণ ও যত্রতত্র ময়লার স্তুপ। বিভিন্ন পরিবহন সংস্থার জন্য বরাদ্দকৃত কাউন্টারগুলোও বহুদিন ধরে বন্ধ রয়েছে।
এই বাস টার্মিনাল নির্মাণের পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল শহরের যত্রতত্র অবৈধ গণপরিবহন স্ট্যান্ড সরিয়ে একটি নির্দিষ্ট স্থানে আনয়ন করা। সে লক্ষ্যে ২০০৭ সালে তৎকালীন পৌর মেয়র ফয়জুল করিম ময়ুন টার্মিনালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং ২০১০ সালে স্থানীয় দুই সংসদ সদস্য আনুষ্ঠানিকভাবে এটি উদ্বোধন করেন।
নগর পরিচালনা ও উন্নীতকরণ অবকাঠামো প্রকল্প এবং পৌরসভার যৌথ অর্থায়নে তিন একর জায়গাজুড়ে টার্মিনালটি নির্মাণে ব্যয় হয় ৩ কোটি ৯৮ লাখ ৭৫ হাজার ৫১৯ টাকা। উদ্বোধনের পর কিছু আন্তঃজেলা বাস ও স্থানীয় অটোরিকশা চলাচল শুরু করলেও অল্প কিছুদিনের মধ্যেই পরিবহনগুলো টার্মিনাল ছেড়ে শহরের মূল রাস্তায় গড়ে ওঠা অবৈধ স্ট্যান্ডে চলে যায়। ফলে টার্মিনালটি অচল হয়ে পড়ে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, টার্মিনালকে কেন্দ্র করে তারা দোকানপাট খুলে বিনিয়োগ করেছিলেন, কিন্তু যাত্রী না থাকায় এখন তারা বেচাকেনা করতে পারছেন না। অধিকাংশ দোকান ভাড়া দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। অনেকেই ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন।
পরিবহন মালিকদের দাবি, টার্মিনাল এমন জায়গায় করা হয়েছে যেখানে দূরপাল্লার গাড়ি যেতে চায় না, চালকরা আগ্রহ দেখায় না এবং যাত্রীরাও দূরত্বের কারণে সেখানে যেতে অনিচ্ছুক। টার্মিনালে নেমে শহরে ঢুকতে অতিরিক্ত ২০-৩০ টাকা ভাড়া দিতে হয়, যা সাধারণ যাত্রীদের জন্য ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
অপরদিকে, শহরের শ্রীমঙ্গল রোডে গড়ে ওঠা ‘ঢাকা বাসস্ট্যান্ড’ নামের অবৈধ স্ট্যান্ডটি বর্তমানে জেলার প্রধান বাসস্ট্যান্ডে রূপ নিয়েছে। এর ফলে শহরে যানজট দিন দিন বেড়েই চলেছে। অথচ শহরের বাইরে আধুনিক টার্মিনালটি অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মৌলভীবাজার পৌরসভার প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বুলবুল আহমদ বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে দেখি।”
বর্তমানে টার্মিনালটিকে কার্যকর করার জন্য নতুন পরিকল্পনা কিংবা উদ্যোগের কোনো লক্ষণও নেই। ফলে বিশাল অঙ্কের রাষ্ট্রীয় অর্থ ও অবকাঠামো বিনিয়োগ এক প্রকার অপচয়ে পরিণত হয়েছে।