গত বছরের ৫ আগস্ট দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই জঙ্গিবাদ ইস্যুতে এক নতুন আলোচনার জন্ম হয়েছে। বিশেষ করে জঙ্গিবাদের বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত শত শত ব্যক্তি জামিনে মুক্তি পাওয়ার ঘটনাটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত তিন শতাধিক ব্যক্তি এই সুযোগে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন সন্দেহভাজন, বিচারাধীন এমনকি যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত অনেক আসামিও।
বিশ্লেষকদের মতে, বিগত সরকারের আমলে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া অনেক নিরাপরাধ ব্যক্তি যেমন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন, তেমনি প্রকৃত জঙ্গিরাও এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে। ফলে জামিনে মুক্তিপ্রাপ্তদের বিষয়টি নিয়ে নতুন করে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন জানিয়েছেন, এই সংখ্যা তিনশতাধিক। তিনি বলেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ সত্যিই জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল।
তিনি আরও বলেন, সরকার এই ইস্যুতে খুবই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। যারা জঘন্য অপরাধ বা সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিল, তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ পুনরায় গ্রেফতারও হয়েছে। সরকার স্পষ্ট করে দিয়েছে, জামিনে মুক্তি পেলেই তারা নিরাপদ নয়, বরং তাদের প্রতি নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে গত আট মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি ও উগ্রবাদী তৎপরতা নতুনভাবে দেখা দিয়েছে। নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহরীর খিলাফত প্রতিষ্ঠার দাবিতে ‘মার্চ ফর খিলাফত’ কর্মসূচি পালন করেছে। এছাড়া বিভিন্ন মাজার ভাঙচুর, নারীদের প্রতি উগ্র দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার, গণজমায়েত তৈরি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর এবং লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে।
এ সকল ঘটনাকে কেন্দ্র করে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর বলে জানিয়েছেন সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোনো উগ্রবাদ বা জঙ্গিবাদ প্রশ্রয় পাবে না। যারা এসব তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে হিজবুত তাহরীরের মতো নিষিদ্ধ সংগঠনের কার্যক্রমে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
জঙ্গি মামলায় জামিন প্রসঙ্গে মাহফুজ আলম বলেন, অনেকেই ভুল পথে গিয়েছিল, তবে এখন তারা সেই পথ থেকে ফিরে এসেছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, জসীম উদ্দিন রাহমানী ঘোষণা দিয়েছে সে উগ্র মতবাদ ত্যাগ করেছে। তবে জামিনপ্রাপ্ত প্রত্যেকেই সরকারের গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছে। তারা কোনো ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, জঙ্গিবাদের ব্যাপারে সরকারের অবস্থান জিরো টলারেন্স। যারা দেশের জন্য হুমকি তাদের প্রতি কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে। তাদের কোনো তৎপরতা ধরা পড়লেই দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। গত আট মাসে জামিনে মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে অনেকেই আবার গ্রেফতার হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তবে পুনরায় গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের সংখ্যা নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হলেও কোনো নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া বন্দি কিংবা নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্যদের গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে বলেও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা কিংবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কোনো বক্তব্য এই বিষয়ে পাওয়া যায়নি।