শেখ হাসিনার পতন ও বাংলাদেশের নতুন অধ্যায়: পাকিস্তানের সম্পর্ক উন্নায়নের হাতছানি

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার ১৫ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৩:৫৬ অপরাহ্ন
শেখ হাসিনার পতন ও বাংলাদেশের নতুন অধ্যায়: পাকিস্তানের সম্পর্ক উন্নায়নের হাতছানি

পাকিস্তানের প্রভাবশালী পত্রিকা ডনের প্রতিবেদন

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় ঘুরেছে গত ৫ আগস্ট, যখন প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হন শেখ হাসিনা। তীব্র ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে হাসিনা সামরিক হেলিকপ্টারে করে ভারতে পালাতে বাধ্য হন। তার শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন পরিচালিত হয়, যেখানে হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশ ধীরে ধীরে ওই দমন-পীড়নের প্রভাব থেকে সেরে উঠছে।


বিশ্বের বুদ্ধিজীবী মহল এই প্রশ্ন তুলছে যে, "আয়রন লেডি" খ্যাত হাসিনা এত দ্রুত কেন তার ক্ষমতা হারালেন। ২০০৯ সাল থেকে, হাসিনা বাংলাদেশকে স্বৈরাচারী শাসনের পথে পরিচালিত করেছেন এবং বিরোধী দলগুলিকে কঠোরভাবে দমন করেছেন। তার শাসন আমলে বহুদলীয় গণতন্ত্রের অবক্ষয় এবং একদলীয় শাসনের চাপানোর প্রচেষ্টার কারণে দেশজুড়ে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছিল। এখন তার ক্ষমতাচ্যুতির পর, এই উদ্বেগের অবসান হয়েছে এবং এটি বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা।


যদিও বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট পরিবর্তিত হচ্ছে, পরিবর্তনের স্থায়িত্ব ও শিগগিরই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। হাসিনার আওয়ামী লীগ দল তাদের বিশাল আস্থা হারিয়েছে, তবে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতিনিধিত্ব করে ফেরার চেষ্টা করছে।


শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটেছে, তবে তা ছিল অন্তর্ভুক্তিমূলক নয়। বেকারত্ব ও মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। পররাষ্ট্র নীতিতে হাসিনা ভারতের আধিপত্যের কাছে আত্মসমর্পণ করেন, যা মুক্তিপ্রেমী বাংলাদেশিদের জন্য এক কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। এখন বাংলাদেশে ভারতের প্রভাব সঙ্কুচিত হলেও, ভারত তার প্রভাব রক্ষার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে।


ভারতের নেতাদের চ্যালেঞ্জ হবে শেখ হাসিনার দিল্লিতে অবস্থানের পরিস্থিতি মোকাবেলা করা। হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে দায়ের করা ৯০টিরও বেশি ফৌজদারি মামলার বিচারের জন্য তাদের ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানানো হয়েছে। ভারত এই পরিবর্তনকে মুসলিম মৌলবাদের দিকে ধাবিত করার চেষ্টা করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক উত্তেজনা মোকাবেলা ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে সংগ্রাম করছে। গার্মেন্টস সেক্টরের সমস্যা সামাল দিতে টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে এবং নির্বাচনের আগে বিচার বিভাগ, পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনে মৌলিক সংস্কারের দাবি উঠেছে। ইউনূস সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করতে চান এবং বাংলাদেশকে আসিয়ানের সদস্য বানাতে চান।


এই পরিবর্তনে পাকিস্তান কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে? পাকিস্তান বাংলাদেশের জনগণের অভিমতকে সম্মান করবে এবং তাদের রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারণের অধিকারকে পূর্ণাঙ্গভাবে সম্মান করবে। হাসিনার পতন বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের একটি সুযোগ প্রদান করেছে, যা ভবিষ্যতে উভয় দেশের জন্য সুফল বয়ে আনতে পারে।


— আইজাজ আহমদ চৌধুরী, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও ইসলামাবাদের সানোবার ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান