মৃত্যু কামনা নাকি সুস্থতার প্রতিক্ষা? (পর্ব ৫)

নিজস্ব প্রতিবেদক
সাখাওয়াত জামিল সৈকত (অতিথি লেখক)
প্রকাশিত: সোমবার ৬ই সেপ্টেম্বর ২০২১ ১২:৪৪ অপরাহ্ন
মৃত্যু কামনা নাকি সুস্থতার প্রতিক্ষা? (পর্ব ৫)

দু’দিন প্রতিক্ষার পর তার শাশুড়ি কে আইসিইউতে ভর্তি করাতে পেরেছে রোহান। ১২/১৫ টা বেডের আইসিইউ ওয়ার্ড। নানা রকমের ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে সজ্জিত প্রতিটি বেড। ভারি যন্ত্রপাতির শব্দ যেন রুমের ভিতরের পরিবেশকে আরো বিভীষিকাময় করেছে। পিপিই, এন-৯৫ মাস্ক সাথে ভাইজার, সুক্যাপ পরায় ডাক্তার-নার্সদের আলাদাভাবে চেনার কোন উপায় নেই। 



আইসিইউ এর ভিতরে ডাক্তার, নার্স, রোগীর স্বজনের ছোটা-ছুটি ২৪ ঘন্টাই চলতেই থাকে। কেউ ওষুধের স্লিপ নিয়ে দোকানে দৌড়াচ্ছে, ডাক্তার কারো ভেন্টিলেটর, ক্যাথেটাল লাগাচ্ছে, আবার কারো জীবনাবসানে সকল যন্ত্রপাতি খুলছে। প্রতি মুহুর্তে এগুলো চলছে। ডানে বামে শুধু স্বজনদের আহাজারি। চিৎকার আর্তনাদে চারিদিকের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে।



এর মধ্যে কেউ রোগীর পাশে বসে কোরআন তেলোয়াত করছে, কেউ আবার পরম আদরে তার স্বজনকে জড়িয়ে ধরে আছে। কেউ লাইফ সাপোর্ট এ সন্তান জন্ম দিয়েও আক্রান্ত হবার ভয়ে বাচ্চাকে কোলে নিতে পারেনি। এমনকি বাচ্চাটার কপালে মহামূল্যবান মায়ের একফোটা দুধও জোটেনি। সংক্রমণের ভয়ে বাচ্চা অন্য একটা হাসপাতালের ইনকিউবেটরে আছে। 



মায়ের আকুতিতে ভিডিও কলে বাচ্চাকে দেখালো ডাক্তাররা। হয়ত বাচ্চার ওই মুখটা দেখার জন্যই মা এতক্ষন বেঁচে ছিলে। কিছুক্ষন পরই সেই মা মারা গেল। ভয়ার্ত কন্ঠে রোহান একজন ডিউটি নার্সকে জিজ্ঞাসা করল শতকরা কতজন রোগী লাইফ সাপোর্ট থেকে সুস্থ হয়। উত্তরে নার্স বলল সে তার দুই বছরের ডিউটিতে কাউকে সুস্থ হতে দেখিনি। তবে আল্লাহ চাইলে পারে না এমন কিছু তো নাই। (চলবে)

                          ----- লেখকঃ আব্দুল হালিম, সহকারী পুলিশ কমিশনার, বাংলাদেশ পুলিশ।