লুট পাটের হোতা আমুর আলিশান প্যালেস এখন এক ভুতুরে বাড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক
মো. নাঈম হাসান ঈমন, জেলা প্রতিনিধি ঝালকাঠি
প্রকাশিত: সোমবার ৪ঠা নভেম্বর ২০২৪ ০৩:৪৩ অপরাহ্ন
লুট পাটের হোতা আমুর আলিশান প্যালেস এখন এক ভুতুরে বাড়ি

ঝালকাঠি শহরের রোনালস রোডে অবস্থিত ভিআইপি বাড়িটি এখন এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক এমপি আমির হোসেন আমুর বাড়িটি ছিল নিরাপত্তা বেষ্টিত এবং আলোচিত। কিন্তু বর্তমানে এই বাড়িটি পোড়া একটি ভূতুরে বাড়ির মতো মনে হচ্ছে।


৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের শোচনীয় ক্ষমতাচ্যুতির পর এই বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। উক্ত দিনে বিক্ষুব্ধ জনতা আমুর বাড়িতে হামলা চালিয়ে সম্পূর্ণ বাড়িটি পুড়িয়ে দেয় এবং মালামাল লুটপাট করে। ওই দিন আমুর অনুসারী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খান আরিফুর রহমানের বাড়িতেও একইভাবে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা এই ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।


সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, আমুর বাড়ির ভেতরের পুরো অংশ পুড়ে কালো হয়ে গেছে, দরজা ও জানালা উধাও। স্থানীয়দের মতে, ৫ আগস্ট দুপুরে শেখ হাসিনার ক্ষমতা ছাড়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই এই হামলার সূচনা ঘটে। বিক্ষুব্ধ জনতা প্রথমে আমুর বাড়িতে হামলা করে, তারপর আওয়ামী লীগ অফিস ও বিভিন্ন নেতার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে লুটপাট শুরু করে।


রিকশা চালক শফিকুল ইসলাম জানান, হামলার সময় স্থানীয় বিএনপি ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের সদস্যরা বিজয় উল্লাস করলেও পরিচিত অপরিচিত অনেকে লুটপাটের কাজে অংশ নেয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, "এমন দিন দেখবো ভাবিনি।" 


সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, আমুর নেতৃত্বে এলাকা থেকে সকল ঠিকাদারি কাজ পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেওয়া লাগত। এখন সেই প্রভাবশালী নেতা যিনি এলাকার শাসন করেছেন, তিনি হঠাৎ করে গৃহহীন ও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছেন।


৫ আগস্টের পর সেনাবাহিনী ও পুলিশ মিলিতভাবে আমুর বাসভবন থেকে বিদেশি মুদ্রাসহ প্রায় পাঁচ কোটি টাকা উদ্ধার করে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে এই অর্থের সন্ধান পান। আমুর বাড়িটি এখন এক ভুতুরে বাড়িতে পরিণত হয়েছে, যেখানে কেউ প্রবেশ করতে সাহস পাচ্ছে না।


বর্তমানে ঝালকাঠির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ বদলে গেছে। এক সময়ের প্রভাবশালী এই নেতা এখন মানুষের মনে ভীতির সঞ্চার করছে। আমির হোসেন আমুর বাড়ির অবস্থা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে। স্থানীয়দের ভাষায়, "এখন এই বাড়িটি যেন এক ভূতুরে বাড়ি, যেখানে শুধুমাত্র শূন্যতা বিরাজ করছে।"