নওগাঁর পোরশায় ১৩ কৃষকের ৫৬ বিঘা জমি দখলচেষ্টার অভিযোগ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিবেদক
রিফাত হোসাইন সবুজ, জেলা প্রতিনিধি, নওগাঁ
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ১০ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:৫৭ অপরাহ্ন
নওগাঁর পোরশায় ১৩ কৃষকের ৫৬ বিঘা জমি দখলচেষ্টার অভিযোগ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে

নওগাঁর পোরশায় ১৩ কৃষকের ৫৬ বিঘা জমি দখলচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে বিএনপির নেতার বিরুদ্ধে। অভিযোগকারীরা দাবি করেছেন, বিএনপি নেতা তৌফিক শাহ চৌধুরী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাদের জমি জবরদস্তি দখল করার চেষ্টা করেছেন। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা পৃথকভাবে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।


ভুক্তভোগী কৃষকেরা জানান, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপি নেতা তৌফিক শাহ ও তার অনুসারীরা তাদের জমি দখল করে নিয়েছে। তারা অভিযোগ করেন যে, তৌফিক শাহ তাদের জমিতে যেতে নিষেধ করেছেন এবং জমির কাছে গেলে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন। 


নওগাঁর পোরশা উপজেলার তেঁতুলিয়া মৌজার তেঁতুলিয়া মঠবাড়ী গ্রামের কৃষক দুর্জয় মণ্ডল, গোপালপুর গ্রামের মোকলেসুর রহমান, মাহতাব কাজী, সলেমান ও খায়রুল ইসলাম এবং পোরশা কাঠপুকুর গ্রামের রবি উড়াও বর্গা নিয়ে জমি চাষ করছেন। একইভাবে সিরাজপুর মৌজায় ফতের আলী সরদার, বেলাল সরদার, মো. মাসুদ ও মতিউর রহমান এবং মোহরপাড়া গ্রামের আসাদুল ইসলাম ও বেলাল হোসেনও জমি চাষ করছেন। তারা চলতি আমন মৌসুমে ধান চাষ করেছেন, কিন্তু সম্প্রতি তাদের জমি দখল করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন।


তবে বিএনপি নেতা তৌফিক শাহ চৌধুরী এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, ওই জমিগুলো তার নিজস্ব এবং ১৫ বছর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে তার জমি দখল করা হয়েছিল। তার মতে, জমি দখলের অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং তিনি কোনো জমি দখল করেননি। তিনি আরও বলেন, কৃষকদের জমিতে যাওয়া নিষেধ করার বা হুমকি দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি।


উপজেলার গোপালপুর গ্রামের মোকলেসুর রহমান অভিযোগ করেন যে, তৌফিক শাহ ও তার অনুসারীরা তাকে জমিতে যেতে নিষেধ করেছে এবং প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। দুর্জয় মণ্ডলও অভিযোগ করেন, তৌফিক শাহ তার জমি দখল করে নিয়েছে এবং তাকে হুমকি দিয়েছে।


সাব্বির হামজা চৌধুরী, যিনি এই জমির মালিক হিসেবে দাবি করেছেন, জানান যে, তৌফিক শাহ ও তার সহযোগীরা ২০১৬ সাল থেকে তাদের জমি দখল করে রেখেছেন। এরই মধ্যে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে এবং কৃষকদের জমি দখলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।



পোরশা থানার ওসি আতিয়ার রহমান জানিয়েছেন, জমি দখল সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে তাদের করণীয় সীমিত। তিনি বলেন, পুলিশ জমি-সংক্রান্ত মামলা সমাধান করতে পারে না এবং কৃষকদের আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। 


বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এএইচএম ওবায়দুর রহমান ইতোমধ্যে পোরশা থানায় তৌফিক শাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। তিনি বলেন, দলের হাইকমান্ড তৌফিক শাহের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে এবং বর্তমানে সাংগঠনিক পদে না থাকায় তার বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।


পোরশায় কৃষকদের জমি দখল চেষ্টার অভিযোগটি এলাকায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। এই ঘটনায় জমির মালিকদের দাবি এবং বিএনপি নেতার অস্বীকৃতির মধ্যে একটি সংঘাতের সৃষ্টি হয়েছে। কৃষকদের জমি রক্ষা এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা হচ্ছে।