জলবায়ুর পরিবর্তনে আশাশুনিতে ভাঙ্গছে নদী, বিলুপ্ত হচ্ছে উদ্ভিদ ও প্রানী

নিজস্ব প্রতিবেদক
সচ্চিদানন্দদেসদয়, আশাশুনি উপজেলা প্রতিনিধি, সাতক্ষিরা
প্রকাশিত: রবিবার ৩রা ডিসেম্বর ২০২৩ ০৬:২০ অপরাহ্ন
জলবায়ুর পরিবর্তনে আশাশুনিতে ভাঙ্গছে নদী, বিলুপ্ত হচ্ছে উদ্ভিদ ও প্রানী

জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হচ্ছে আশাশুনির উপকুলীয় এলাকা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার আশাশুনিরপ্রতাপনগর, আনুলিয়া, খাজরা, আশাশুনি। 


১৯৮৮-এর ২৯ নভেম্বরের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় কেড়ে নিয়েছিল এ জনপদের মানুষের জীবন। কেউ হারিয়েছিলেন কোলের শিশু, কেউ স্ত্রী, কেউ স্বামী। সেই ভয়াল দিনের পর এখানে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর থাবা বসিয়েছিল ভয়াল সিডর। ২০০৯-এর ২৫ মে আঘাত হেনেছিল আইলা। 


এরপর আরও কয়েকটি ছোট-বড় ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের পর ২০১৯-এর ৪ মে ফণী, একই সালের ১০ নভেম্বর বুলবুল আঘাত করে লন্ডভন্ড করে দেয় সাতক্ষীরা-খুলনা উপকূলকে।


 এর ক্ষত না শুকাতেই ২০২০ সালের ২০ মে সুপার সাইক্লোন আম্পান এবং ২০২১-এর ২৬ মে প্রবল শক্তিধর ইয়াসের জলোচ্ছ্বাস কেড়ে নেয় উপকূলের মানুষের জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রগুলো। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশে ঘন ঘন ঝড়-জলোচ্ছ্বাস এভাবেই আঘাত হানছে। ২০০৭ থেকে এ পর্যন্ত গত ১৫ বছরে ১৩টি ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের দাপটে উপকূলীয় মানুষকে বারবার বসত পরিবর্তন করতে হয়েছে।


 সেই সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাণ, সম্পদ সবই। মানুষের বসবাসের মাটি কমে যাচ্ছে। লবণপানি গিলে খাচ্ছে কৃষিজমি। হাজার হাজার পরিবার হচ্ছে উদ্বাস্তু। জনজীবন হয়ে পড়ছে বিপর্যস্ত।জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবসৃষ্ট নানা কারণে আশাশুনির উপকূল প্রতিবছরই জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছে। এ অঞ্চলের নদীগুলো পলি জমে পানিপ্রবাহ হারিয়ে ফেলছে। বৃষ্টির পানির ধারণক্ষমতা না থাকায় তা প্লাবিত হচ্ছে জনপদে। এভাবেই স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছে একের পর এক জনপদ। 


সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়ন এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আশাশুনির উপকূলীয় অঞ্চলের মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততার ফলে জরায়ুসংক্রান্ত বিভিন্ন রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে এসব এলাকার নারীরা। সে জন্য অল্প বয়সেই এ এলাকার নারীরা জরায়ু কেটে ফেলতে বাধ্য হচ্ছে। আশাশুনি উপকূলীয় বিভিন্ন উপজেলার প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে জরায়ুসংক্রান্ত রোগে ভুগছেন এমন নারীর সন্ধান পাওয়া যাবে।


জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উপকূলীয় এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি এবং গোসলসহ দৈনন্দিন কাজে অপরিচ্ছন্ন ও মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ত পানির ব্যবহারের ফলে শিশু থেকে কিশোরী এবং নারীরা লিউকোরিয়ায় ভুগছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ত পানি ব্যবহারের ফলে নারীদের গর্ভপাতের হার বেড়ছে। লবণাক্ত পানিতে চিংড়ির পোনা ধরা, মাছের ঘেরে কাজ করা, লবণাক্ত পানি পানসহ দৈনন্দিন কাজে নারীকে সবচেয়ে বেশি সময় থাকতে হয়। জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ বিপর্যয় ও লবণ পানির আগ্রাসনে এ অঞ্চলে হ্রাস পেয়েছে কৃষিজমি।  


ষাটের দশকে নির্মিত বাঁধগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে প্রতিনিয়ত জোয়ারের উপচেপড়া পানিতে প্লাবিত হচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকা। অসংখ্য নদ-নদী শুকিয়ে যাওয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।লবণাক্ততা বাড়ায় কারণে উপকূলের  মানুষ তীব্র খাবার পানি সংকটে ভুগছেন। এখানে একজন মানুষ প্রতিদিন গড়ে মাত্র দুই লিটার খাবার পানির মাধ্যমে ১৬ গ্রাম লবণ গ্রহণ করেন।  


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে অতি দরিদ্র মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। চরম আকারে হ্রাস পেয়েছে কৃষি উৎপাদন, গাছপালা নেই বললে চলে। বিলুপ্ত হয়েছে ৬০ প্রজাতির মাছ ও অসংখ্য প্রজাতির পশুপাখি।