দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ার প্রথম দিনেই বরিশালে বেড়েছে পরিবহন যাত্রীদের চাপ। বিশেষ করে বরিশালে আসা যাত্রীদের চাপ। ঢাকা থেকে মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টার মধ্যে বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস র্টামিনালে আসতে পেরে খুশিতে আনন্দিত যাত্রীরা। স্বপ্নের সেতুর প্রথম দিনে একটু যান-বাহনের চাপ থাকার কারনে টোলঘর স্থানে একটু বিলম্বিত হওয়া সত্বে যাত্রীদের মাঝে ছিল ভিন্ন রকম আনন্দ। তারা পদ্মার পানির উপর থেকে ভেসে নয়, এবারই প্রথম ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে থাকার জন্য পদ্মার পানির উপর নির্মিত সেতু দিয়ে নিজ গন্তব্যে আসতে পেরে জীবনে এক নতুন আনন্দ পেয়েছে বলে জানান বরিশালে আসা বিভিন্ন পরিবহনের মহিলা ও পুরুষ যাত্রীরা।
রবিবার বরিশালের কেন্দ্রীয় নতুল্লাবাদ বাস র্টামিনালে সর্বপ্রথম বে-সরকারী এসি বাস সাকুরা পরিবহন ঢাকার সায়েদাবাদ বাস র্টামিনাল থেকে সকাল সাড়ে ৫টায় ৪০ জন যাত্রী নিয়ে বরিশালে যাত্রা শুরু করেন। গাড়িটি সকাল সোয়া ১০টায় যাত্রীদের নিয়ে বরিশালে এসেছেন। এদিকে সকাল ১১টায় বরিশাল থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্যেশে সাকুরা পরিবহনের একটি বাস ছেড়ে যায় বলে জানিয়েছেন সাকুরা পরিবহনের কাউন্টার ইনচার্জ। রবিবার বরিশালে সবার আগে পদ্মা সেতু দিয়ে যাত্রী নিয়ে আসা সাকুরা পরিবহনের সুপারভাইজার নাসির বলেন বহু কষ্টের পর আজ আমরা মুক্ত হলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারনে আজ আমরা দক্ষিণাঞ্চলবাসী বড় একটি উপহার পেয়েছি। যার নাম পদ্মা সেতু। তিনি আরো বলেন, এখন আর যাত্রীদের খারাপ আচারন শুনতে হবে না। ঢাকা থেকে সঠিক সময় যাত্রীদের নিয়ে বরিশালে পৌঁছাতে পারবো। ফেরি জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে না।
অন্যদিকে সাকুরা পরিবহনের অপর একটি গাড়ি সকাল সাড়ে ৬ টায় ঢাকার গাবতলী থেকে বরিশালে যাত্রীদের নিয়ে তিন ঘন্টার মধ্যে নতুল্লাবাদ এসে পৌঁছান। এছাড়া ঢাকা থেকে সকাল ৮টায় ছেড়ে আসা ইলিশ পরিবহনের চালক মোখলেস বলেন, টোল ঘরে প্রথম দিন একটু ভীড় থাকার কারনে যাত্রীদের নিয়ে বরিশালে আসতে তিন ঘন্টা সময় লেগেছে। টোলঘরে ভীড় না হলে আরো আগে বরিশালে এসে পেঁছে যেতাম। এসময় তিনি অভিযোগ করেন, আমরা ইচ্ছে করলে আরো দ্রুত কম সময়ের মধ্যে বরিশালে আসতে পারবো যদি বরিশালে আসার সড়কগুলো যানজট মুক্ত করা হয়। তবে সড়কে জায়গা কম তার উপরে বিভিন্ন ছোট যানবাহন থাকার কারনে তাদের দ্রুত আসার ক্ষেত্রে বড় সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়।
এদিকে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার সাথে সাথে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা গ্রীন লাইন এসি পরিবহন কর্তৃপক্ষ প্রথম দিনে ৪০ ও ২৭ সিটের ১২ টি গাড়ি চালু করেছে। বরিশাল গ্রীনলাইন কাউন্টার ইনচার্জ হাসান সরদার বাদশা জানান, তাদের মালিক ব্রান্ড এসকানিয়া ও ম্যান নামের গাড়িগুলো জার্মান থেকে আমদামী করেছে। এছাড়া ভলবো নামের গাড়িগুলো সুইডেন থেকে আমদানী করেছে। তারা প্রথম দিনে বরিশালে ১২টি গাড়ি দিয়ে সার্ভিস শুরু করেছে। তাদের ৪০ সিটের এসি গাড়ির জনপ্রতি সিড ভাড়া ৭ শত ৫০ টাকা করে নিচ্ছেন। অপরদিকে ২৭ সিটের এসি গাড়ির ভাড়া জনপ্রতি ১ হাজার টাকা করে নির্ধারন করা হয়েছে।
গ্রীন লাইন পরিবহনের চালক ইয়াসিন জানান, সকাল সাড়ে ৬ টায় ঢাকার আরামবাগ থেকে ছেড়ে আসার পর ৪০ মিনিট টোল ঘরে বিলম্ব হওয়ার পরও তারা তিন ঘন্টায় বরিশালে আসতে পেরেছেন।
সরেজমিনে বরিশাল কেন্দ্রীয় নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে দেখা গেছে ঢাকাগামী বিভিন্ন পরিবহন কাউন্টারে যাত্রীদের প্রচন্ড চাপ। স্বাচ্ছন্দে স্বল্প সময়ে ঢাকা যাওয়ার পাশাপাশি স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারবেন এমন আশায় অনেকেই কাউন্টারগুলোর সামনে টিকিটের জন্য ভীড় জমিয়েছেন। একই সময় দেখা গেছে সরকারী বিআরটিসি কাউন্টারে ঢাকাগামী যাত্রীদের প্রচুর ভীড়। টিকিট কাউন্টারে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিটের জন্য অপেক্ষা করছেন অনেকেই। ঢাকাগামী যাত্রী আব্দুল হালিম বলেন, ফেরীঘাটের দীর্ঘদিনের বিরম্বনা না থাকায় বাসে ঢাকা যাবেন তিনি। পাশাপাশি স্বপ্নের পদ্মা সেতুও দেখা হবে। আরেক যাত্রী সাবিনা সাজ্জাদ বলেন, পদ্মা সেতু দেখার জন্য তিনদিন পূর্বে তিনি টিকিট কেটে রেখেছেন।
বরিশাল বিআরটিসি’র ডিপোর ইনচার্জ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিআরটিসি এবার বরিশাল-ঢাকার জন্য ১৪ টি এসি সার্ভিস বাস চালু করেছে। এর মধ্যে ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা রুটে ২টি, ভান্ডরিয়া ১টি ও বরিশাল-ঢাকা রুটে ১১টি এসি বাস সার্ভিস চালু করেছে। তিনি জানান, তারা বরিশাল থেকে ঢাকার গুলিস্তান পর্যন্ত জনপ্রতি ৫০০ টাকা ভাড়া নেওয়ার কারনে তাদের গাড়িতে যাত্রী চাপ বেশি রয়েছে।
অন্যদিকে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার প্রথম দিনেই বরিশাল সিটির আওতাধীন বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে বিভিন্ন যাত্রীবাহী ও পন্যবাহী গাড়ির চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানের সড়কে দায়িত্বরত ট্রাফিক সদস্যদের হিমশিম খেতে দেখা গেছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।