গলাচিপায় সড়কে ধান মাড়াই, যেন মরণ ফাঁদ !
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার বিভিন্ন সড়ক এখন ধান মাড়াই যন্ত্রের দখলে থাকায় মরণ ফাঁদে পরিনত হয়েছে। উপকূলীয় জনপদ গলাচিপা উপজেলার কৃষকরা আউশ মৌসুমে ধান কাটা ও মাড়াইতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। জমি থেকে ধান কেটে আনার পর চলছে মাড়াইয়ের কাজ। মাড়াই শেষে শুরু হয় ধানের খড় শুকানো। এরপর স্তুপ করে রাখা হয় ওই সব শুকনো খড়। এর এসব কাজের সবই চলছে এখন ব্যস্ততম বিভিন্ন সড়কের ওপর। এতে ভোগান্তিতে পড়ছে পথচারীরা।
গ্রামীণ সড়কের বড় একটি অংশ বেদখল হয়ে যাওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। প্রায় প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট বড় হতাহতের ঘটনা। সবচেয়ে বেশি দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে মোটর সাইকেল, বাই-সাইকেল মাহেন্দ্রা ও অটো রিকশার আরোহীরা। সড়কগুলো এখন যেন ধান মাড়াই ও খড় শুকানোর চাতালে পরিণত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার গ্রামীণ সড়কের বিভিন্ন স্থানে খেত থেকে ধান কেটে স্তুপ করে রাখা হয়েছে। পাশেই ওই সব ধান ইঞ্জিনচালিত যন্ত্র (ধানের মড়াই মেশিন) দিয়ে মাড়াই করা হচ্ছে। মাড়াই শেষে ধান বাড়িতে নিয়ে গেলেও খড় সড়কের ওপরেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সড়কের পাশে শুকানো হচ্ছে ওই সব খড়। আবার অনেকে খড় শুকানোর পর সড়কের পাশেই রেখেছেন। এর মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে চলছে নানা ধরনের যানবাহন।
উপজেলার গোলখালী, ডাকুয়া, রতনদী তালতলী, পানপট্টি, গলাচিপা সদর, বকুলবাড়িয়া, কলাগাছিয়া, গজালিয়ায় ছোট-বড় বিভিন্ন সড়কেও আউশ ধান মাড়াই ও খড় শুকানোর একই চিত্র চোখে দেখা মেলে। সড়কের ওপরে ভেজা খড়ের ওপর দিয়ে মোটর সাইকেল চালানো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে এমনই আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেন গলাচিপা-উলানিয়ায় চলাচলকারী মোটর সাইকেল চালক মো. মহাসিন প্যাদা জানান, গলাচিপা থেকে উলানিয়া এবং গলাচিপা-বদনাতলী সড়কে মাড়াই থাকার করনে মোটর সাইকেল চালাতে কষ্ট হয়। ধানমাড়াই ও শুকানোর কাজ করায় নির্দিষ্ট গতিতে গাড়ি চলানো যায় না।
এ সময় কথা হয় ধান মাড়াই কাজে ব্যস্ত মো. আল আমিন সঙ্গে। তিনি বলেন, আগে তো গৃহস্থের ধান মাড়াইয়ের জন্য অনেক খোলা জায়গা ছিল। এখন তা নেই। তাই গ্রামের প্রায় সবাই রাস্তার ওপরে ধান মাড়াই ও শুকানোর কাজ করে। সড়কে চলাচলরত একাধিক মোটরসাইকেল আরোহী ও অটো চালকের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, উপজেলার বিভিন্ন সড়কে ধান কাটার এ আউশ মৌসুমে ধান মাড়াই ও খড় শুকানোর কারনে প্রচুর ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। অনেক সময় তারা যানবাহন দেখেও না দেখার ভান করে।
রতনদী তালতলী ইউনিয়নের কৃষক জীবন হাওলাদার জানান, বাড়ির উঠান ছোট হওয়ায় জমির ধান মাড়াই করতে অসুবিধা হয়। তাই খোলামেলা এ সড়কটি ব্যবহার করছেন। দূর্ঘটনা ঘটতে পারে এমনটা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘কী করমু, বাড়িতে জায়গা না থাকায় রাস্তায় ধান মাড়াই করতেছি।’
এ বিষয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরজু আক্তার জানান, জায়গার অভাবে কৃষকরা আউশ মৌসুমে ধান মাড়াই ও খড় শুকানোর কাজ করে উপকৃত হচ্ছে। তবে এ কারণে ছোট-বড় দূর্ঘটনা ঘটায় যাতে তারা এ কাজটি না করেন এজন্য কৃষকদের সচেতনতা করা ব্যতিরেকে আর কোন বিকল্প নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশিষ কুমার বলেন, এখানকার সড়কের ওপরে ধান মাড়াই ও শুকানোর কাজ বন্ধ করতে হবে। সড়কের উপর প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে কেউ যাতে যানচলাচলে বাঁধা ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য সতর্কতা ও তাদের মাঝে সচেতনবোধ তৈরির পাশাপাশি না মানলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।