প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর উপহার পেয়ে হাওরপারে খুশির বন্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সোমবার ২৬শে এপ্রিল ২০২১ ১১:২৪ পূর্বাহ্ন
প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর উপহার পেয়ে হাওরপারে খুশির বন্যা

খালিয়াজুরী উপজেলা যেনো নেত্রকোনার এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। বছরের অর্ধেক সময় পানিতে তলিয়ে থাকে বাকী অর্ধেক শুকনো। জীবন যাপনও এই হাওরপারে কঠিন এক যুদ্ধ। তার মাঝে কিছু সহায় সম্বলহীনদের হাওরের মাঝখানে বাঁশের খুটির তৈরি ছোট ছোট টিনের খুপরিই ছিলো তাদের ঠিকানা। 



নাগরিক  সুযোগ-সুবিধা থেকে বিরত এইসব মানুষ সেখানে বাস করতেন ঝড়-তুফান আর বান-আফালের (উত্তাল ঢেউ) সাথে সংগ্রাম করেই। 


উপজেলার এই দুরাবস্থা পাল্টে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর উপহারে। উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে ৮৪৩ টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার আশ্রয়ন প্রকল্প -২ আওতায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে পাচ্ছেন জমিসহ রঙ্গিন টিনশেটের পাকা ঘর। আর এসকল তত্বাবধায়ন করছেন উপজেলা প্রশাসন। 


খালিয়াজুরী উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মেন্দিপুর ইউনিয়নে ৭০ চাকুয়া ইউনিয়নে ৪৩, খালিয়াজুরী সদর ইউনিয়নে ২৬১, নগর ইউনিয়নে ৭৮, কৃষ্ণপুর ইউনিয়নে ১৮৫ ও গাজীপুর ইউনিয়নে ১৮৭ গুলো ঘর হচ্ছে। 


সবমিলিয়ে উপজেলায় ৮৪৩ টি পরিবারকে জমিসহ পাকা ঘর তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে। প্রথম ধাপে প্রতিটি ঘর তৈরিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। ঘরে রয়েছে দুইটি কক্ষ, একটি টয়লেট এবং রান্নার জন্য একটি কক্ষ ও ঘরের সামনে একটি বারান্দা। 


ইতিমধ্যেই এমন পাকা ঘর পেয়েছেন অন্তত ৪৪৩টি পরিবার। আরও ৪০০টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য দ্বিতীয় ধাপে কাজ চলছে। জন্ম থেকেই নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বি ত হাওরবাসীদের সুযোগ-সুবিধা দিতে গত কয়েক বছরে একাধিক উদ্যোগ নেয় স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন।


এসব উদ্যোগের মধ্যে উপজেলার ১হাজার ৫ শত ভূমিহীন পরিবারকে খাস জমি বন্দোবস্ত দিয়ে কবুলত হস্তান্তর করা হয়। হেমনগর কান্দায় আশ্রয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, হাওরের ফসল রক্ষা বেরী বাঁধ নির্মাণ,  বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ দিতে নলকূপ স্থাপন ও উপজেলা সদরের সাথে প্রতিটি ইউনিয়নের সংযোগ সড়ক নির্মাণ ছিলো এগুলোর মধ্যে অন্যতম।


নতুন পাকা ঘর পাওয়া খালিয়াজুরী ইউনিয়নের মমিন নগরের মো. আলাল মিয়া ( ৪৫)  জানান, হাওরের মধ্যিখানে বাঁশের পালা দিয়া ঘর বাইন্দ্যা আমরা পোলা-পুড়ি লইয়া থাকতাম। এইডাই আছিন আমরার একমাত্র ঠিহানা। অহন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমরারে এই বিল্ডিং ঘর দিছে। আমরা ভালাই আছি।


কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের জাহেরপুর গ্রামের সুবিধাভোগী মো. লিয়াকত আলী (৫৮) বলেন, স্বপ্নেও ভাবিনি নিজের একটি ঠিকানা হবে। বিল্ডিং ঘরে ছেলে মেয়ে নিয়ে থাকবো। সব কিছু হয়েছে ইউএনও স্যারের জন্য। তিনিই আমাদের দুরাবস্থার কথা সরকারের নজরে এনেছেন। তাঁর কারনেই প্রধানমন্ত্রী আমাদের বাড়ি উপহার দিয়েছেন। এজন্য শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ, তিনি আমাদের মতো গরীব মানুষকে ঘর দিয়েছেন।


খালিয়াজুরী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. রাজীব আহমদ জানান, মুজিবর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না '-এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের অধীনে উপজেলায় প্রথম ধাপে ৪৪৩ টি গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ সেমি পাকা ঘর করে দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে আরও ৪০০  ঘরের কাজ চলমান। এ মিশন বাস্তবায়নে কাজ করছি আমরা।


খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এএইচএম আরিফুল ইসলাম জানান,  উপজেলাবাসীর জীবনমান উন্নয়নে তাদের জন্য ঘর তৈরিতে বরাদ্দ চেয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় বরাবর চিঠি দিই আমরা। বরাদ্দ পাওয়ার পর কাজ শুরু করা হয়। এতে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক কাজী মো. আবদুর রহমান স্যারের দিক নির্দেশনা ও পরামর্শ প্রকল্প বাস্তবায়নে সাহস জুগিয়েছেন। খালিয়াজুরীর উন্নয়ন বর্তমান সরকারের বিশাল উন্নয়নযজ্ঞের একটি দৃষ্টান্ত মাত্র। 


#ইনিউজ৭১/জিয়া/২০২১