ধর্ষণের ঘটনায় হত্যা বা আত্মহত্যা কি জায়েজ?

নিজস্ব প্রতিবেদক
ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার ১০ই অক্টোবর ২০২০ ০৯:২৮ পূর্বাহ্ন
ধর্ষণের ঘটনায় হত্যা বা আত্মহত্যা কি জায়েজ?

ধর্ষণ বা ব্যভিচার একটি মারাত্মক অপরাধ। ইসলামি শরিয়তে এর সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে। ইসলামি বিধানের কার্যকারিতা না থাকাই ধর্ষণ-ব্যভিচার দিন দিন লাগামহীনভাবে বেড়ে চলছে। কিন্তু ধর্ষণ-ব্যভিচার থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হত্যা-আত্মহত্যা সম্পর্কে ইসলাম কী বলে? ইসলামি শরিয়তে ধর্ষণ-ব্যভিচারের এত সুন্দর সমাধান বা শাস্তির সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে যে, যদি কেউ বিধান অনুযায়ী বিচার ফয়সালা করে তবে সামাজ জীবনে ধর্ষণ-ব্যভিচার থাকবে না বললেই চলে। কেননা অবিবাহিত নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে এ অপরাধে নির্ধারিত সংখ্যায় বেত্রাঘাত করার বিধান রয়েছে। আবার বিবাহিত নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে শাস্তি হলো পাথর মেরে হত্যা করা। প্রকাশ্যে উন্মুক্ত ময়দানে অপরাধীর ওপর এ শাস্তি কার্যকর হলে নিশ্চিত ধর্ষণ-ব্যভিচার থাকব শূন্যের কোটায়।

ধর্ষণ-ব্যভিচারে হত্যা
ধর্ষণ-ব্যভিচারে দুইভাবে হত্যা কার্যক্রম সংঘটিত হয়। অনেক সময় ধর্ষিতা নিজেকে রক্ষা করতে গিয়ে ধর্ষণকারীকে হত্যা করে বসে। আবার অনেক ক্ষেত্রে ধর্ষণকারী বা ব্যভিচারী এ অপরাধ ঘটানোর পর ধর্ষিতাকে হত্যা করে। ইসলামে এ দুটি বিষয়েও রয়েছে সমাধান।

ধর্ষণ প্রতিরোধে হত্যা
ধর্ষণ বা ব্যভিচারের ঘটনা থেকে আত্মরক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা ফরজ বা আবশ্যক। তারপরও যদি কোনো নারী জোরপূর্বক ধর্ষণ-ব্যভিচারে আক্রান্ত হয় তবে ওই নারী গোনাহগার হবে না। তবে জালিমরা আল্লাহর কাছে অপরাধী হিসেবে গণ্য হবে।ধর্ষণ বা ব্যভিচার থেকে নিজেকে রক্ষা করতে গিয়ে যদি ধর্ষককে হত্যা করা হয় বা কোনোভাবে ধর্ষক হত্যার শিকার হয়; ইসলামি আদালতে এ হত্যায় ওই নারীর কোনো শাস্তি হবে না।হজরত ইবনে আব্দুল বার রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এ সম্পর্কে বলেন, ‘আমার জানামতে আগের-পরের কোনো আলেমের মধ্যে এ বিষয়ে দ্বিমত নেই যে, জোরপূর্বক ধর্ষণের শিকার নারীর ওপর কোনো হদ বা দণ্ড প্রয়োগ করা হবে না; যদি সঠিকভাবে প্রমাণিত হয় যে, সে অপহরণ ও ধর্ষণের শিকার হয়েছে।


আর ধর্ষিতা আত্মরক্ষা করতে গিয়ে কিংবা অত্যাচারের শিকার হয়ে যদি মারা যায় তবে পরকালে ওই নারী শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করবেন। কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে পাকে তা সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছেন।
‘যে ব্যক্তি তার ধন-সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয়, সে শহিদ।
যে ব্যক্তি নিজেকে রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয়, সে শহিদ।
যে তার দ্বীন রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয়, সে শহিদ।
আর যে তার পরিবার রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয়, সে-ও শহিদ।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি)

ধর্ষিতার আত্মহত্যা কি জায়েজ?
ধর্ষণ বা ব্যভিচারের শিকার হয়ে আত্মহত্যাকে ইসলাম সমর্থন করে না। বরং ইসলামের দৃষ্টিতে পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন; কোনো অবস্থাতেই আত্মহত্যা করা জায়েজ নয়। সুতরাং দুঃখ-কষ্ট, ব্যথা-বেদনা, অসুস্থতা-হতাশা, শত্রুর আক্রমণ এমনকি সম্ভ্রমহানি, সম্ভ্রমহানির পর লোকলজ্জা ও কঠিন পরিস্থিতির কারণে আত্মহত্যা করা যাবে না। কেননা ইসলামে আত্মহত্যা কবিরা গোনাহ ও জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম কারণ। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَنفُسَكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُمۡ رَحِيمٗا - وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ عُدۡوَٰنٗا وَظُلۡمٗا فَسَوۡفَ نُصۡلِيهِ نَارٗاۚ وَكَانَ ذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرًا

‘আর তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু। আর কেউ জুলুম করে, অন্যায়ভাবে তা (আত্মহত্যা) করবে, অবশ্যই আমি তাকে অগ্নিদগ্ধ করবো, আল্লাহর পক্ষে তা সহজসাধ্য।’ (সুরা নিসা : আয়াত ২৯-৩০)

হজরত ছাবিত বিন জিহাক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোনো বস্তু দিয়ে নিজেকে হত্যা করবে, কেয়ামতের দিন তাকে সে বস্তু দিয়েই শাস্তি প্রদান করা হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

ধর্ষিতা হওয়ার আশংকায় আত্মহত্যা
যদি কোনো মুসলিম নারী এ ধারণা পোষণ করেন যে, শত্রুরা তার ইজ্জতের ওপর হামলা করবে; তবে কি ওই নারী নিজের সম্ভ্রম-ইজ্জত রক্ষা করার জন্য আত্মহত্যা করতে পারবেন? ইসলামে কি তা বৈধ?

এ সম্পর্কে সৌদি সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদের স্থায়ী ফতোয়া হলো-
لا يجوز لها أن تقتل نفسها، ولو خافت أن يقع بها ما ذُكر قهرا، وهي معذورة إن حصل ما خافت دون رضاها
অর্থাৎ ‘তার জন্য আত্মহত্যা করা জায়েজ নয়; যদিও তার সঙ্গে জোরপূর্বক উল্লেখিত কিছু ঘটার আশঙ্কা করে। সে যা আশঙ্কা করছিলো তা যদি তার ইচ্ছার বাইরে সংঘটিত হয়; তাহলে সে নির্দোষ বলে গণ্য হবে।’

ইসলামি শরিয়তে নিষিদ্ধ ও দণ্ডযোগ্য অপরাধ ধর্ষণ ও ব্যভিচার। এ মহামারি থেকে উত্তরণে ইসলামি দণ্ড প্রয়োগের বিকল্প নেই। পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, কোনো অবস্থাতেই ধর্ষণ থেকে বাঁচতে আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেয়ার সুযোগ নেই। বরং সর্বশক্তি দিয়ে এ মহামারি ধর্ষণ ও ব্যভিচার থেকে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা অব্যাহত রাখা জরুরি।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব নারীকে ধর্ষণ ও ব্যভিচার থেকে হেফাজত করুন। জালিম অত্যাচারীদের প্রতিহত করার তাওফিক দান করুন। নারীদের নিজেদের আত্মরক্ষায় মার্জিত ও ইসলামের বিধান মেনে জীবন পরিচালনায় নিয়োজিত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।