প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৪৭
ইসলামে দান-সদকা এমন এক আমল যা শুধু দুনিয়ার নয়, আখিরাতের কল্যাণেরও মাধ্যম। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বিভিন্ন স্থানে দান-সদকার গুরুত্ব ও ফজিলত উল্লেখ করেছেন। সূরা বাকারা, আয়াত ২৬১-এ আল্লাহ বলেন, যারা আল্লাহর পথে নিজেদের সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ একটি শস্যদানা সদৃশ, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মে এবং প্রতিটি শীষে থাকে একশত দানা। এভাবেই আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেন। এই আয়াত প্রমাণ করে যে দান শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উপায় নয়, বরং তা বহুগুণ সওয়াবেরও উৎস।
রাসুলুল্লাহ (সা.) হাদিসে দান-সদকার ফজিলত তুলে ধরেছেন। সহিহ মুসলিমের এক হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, “দান করার মাধ্যমে সম্পদ কমে না। বরং আল্লাহ তা বৃদ্ধি করে দেন।” এই হাদিস দানকারীকে সাহসী করে তোলে এবং মানুষকে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করে। মুসলমানদের উচিত এ শিক্ষাকে জীবনে বাস্তবায়ন করা।
ইসলাম দানকে শুধু ধনী ব্যক্তির দায়িত্ব হিসেবে রাখেনি, বরং প্রত্যেকের সাধ্য অনুযায়ী কিছু না কিছু দেওয়ার তাগিদ দিয়েছে। কোরআনে বলা হয়েছে, “তোমরা যা কিছু উত্তম ব্যয় করো, তা নিজেদের জন্যই এবং তোমরা যা ব্যয় করো, তা আল্লাহ জানেন” (সূরা বাকারা ২৭২)। এ থেকে বোঝা যায়, দান শুধুমাত্র গরিবের উপকার নয়, বরং দাতার আত্মিক উন্নয়নও নিশ্চিত করে।
দান শুধু অর্থ দিয়েই সীমাবদ্ধ নয়। ইসলাম শিক্ষা দেয়, সদা হাসিমুখ থাকা, কারও বোঝা বহন করা বা ভালো কথা বলা—এসবও সদকার অন্তর্ভুক্ত। সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, “প্রত্যেক সৎকাজই সদকা।” অর্থাৎ ছোট কাজকেও ইসলাম মহান কাজের মর্যাদা দিয়েছে।
ইসলামে দান-সদকার আরেকটি বড় দিক হলো গোপনে দান করা। সহিহ বুখারির হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি এত গোপনে দান করে যে তার বাম হাতও ডান হাতের দান সম্পর্কে জানে না, কেয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়ায় থাকবে। এ থেকে বোঝা যায়, গোপন দানের মর্যাদা কতটা উচ্চ।
দান-সদকা মানুষের অন্তরে বিনয়, সহানুভূতি ও দয়ার গুণাবলী তৈরি করে। কোরআন-হাদিসের আলোকে সমাজে দারিদ্র্য দূর করা এবং অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো একজন মুসলমানের নৈতিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব। ইসলাম শুধু ইবাদতের মাধ্যমে নয়, সামাজিক কল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমেও মানুষকে পরিপূর্ণ মুসলমান হতে উৎসাহিত করে।
আজকের সমাজে ধনী-গরিবের বৈষম্য দূর করতে দান-সদকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুসলমানদের উচিত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান করা এবং সমাজে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগিয়ে আসা। এতে সমাজ হবে শান্তিপূর্ণ ও কল্যাণমুখী।
শেষত, কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত দান-সদকার শিক্ষা শুধু একজন মুসলমানের ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য নয়, বরং পুরো সমাজকে মানবিক ও ন্যায়ভিত্তিক করার জন্য। তাই আমাদের উচিত দান-সদকার এই শিক্ষা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে ইসলামি সমাজ গঠন করা।