ইউএফও দর্শনকে সহী বলে শেষতক স্বীকার করলো পেন্টাগন অর্থাৎ আমেরিকান প্রতিরক্ষা বাহিনী। ২০০৪ সনে আমেরিকান ফাইটার জেটের পাইলট ডিউটিরত অবস্থায় ইউএফও দেখেছেন। তিনি এই খবর ২০১৭ সনে সাংবাদিকদের জানান। মার্কিন ফাইটার জেটবহরের সাথে উড়ন্ত সসারের এনকাউন্টার বা সাক্ষাৎ আমেরিকান নেভি শিপ তাদের ইনফ্রারেড ক্যামেরায় রেকর্ড করেছে। সেই ছবির সাথে ফাইটার জেটের গান ক্যামেরায় লকডাউন করা প্রায় ৪০ মিটার প্রশস্ত উড়ন্ত সসারের তিনটি ভিডিও পেন্টাগন প্রকাশ করেছে ২৭ এপ্রিল, ২০২০।
করোনা আবির্ভাব শুরু হবার পাঁচ মাস পরে হটাৎ তিনটি ভিডিও ও ছবি প্রকাশ করে ফ্লায়িং সসারের অস্ত্বিত্ব প্রমান করে সবাইকে অবাক করে দিলো পেন্টাগন। আজ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সিএনএনকে বলেছেন, আমাদের পাইলটরা ভালো জানে তারা কি কি দেখেছে। তিনি একবছর আগে এগুলিকে সঠিক দেখা নয় বলে মন্তব্য করেছিলেন।
একজন পাইলট বলেছেন, আমার ফাইটারের নাকের সামনে থেকে অতি দ্রুত গতিতে মনে হয় দুই সেকেন্ডে উপরে উঠে গেছে অবজেক্টটি এতো ফাস্ট যে আমার মনে হয়েছে যেন আমি কিছুই দেখিনি।
আরেকজন পাইলট বলেছেন, প্রশান্ত মহাসাগরের ৫০ মিটার উপর দিয়ে প্রথমে ভেসে থাকা তারপর প্রচন্ড গতিতে উড়ে অদৃশ্য হতে দেখেছেন একই ভাবে একটি ফ্লায়িং সসারকে। অনেক ইউএফও দর্শক বলেছেন ডিস্কের চারপাশে একধরনের আলোও তারা দেখতে পেয়েছেন।
১৯৪৭ সনে আমেরিকার রজওয়েল এয়ারফোর্স বেজ এলাকায় একটি ১২ ফিট সাইজের পরীক্ষামূলক সামরিক বেলুন যেটি দেখতে সসারের মতো ছিলো সেটি ক্রাশ করলে গুজব ছড়িয়ে যায় একটি ফ্লাইং সসার ক্রাশ করেছে। আরো গুজব ছিলো চোখ বড়ো একজন এলিয়েন ধরা পড়েছে। আমেরিকান আর্মি রজওয়েল এলাকা পাব্লিকের জন্যে নিষিদ্ধ করলে পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত সব গুজব "ষড়যন্ত্র থিওরি" হিসাবে প্রচারিত হয়। সবাই বলে, পেন্টাগন রজওয়েলের সব সংবাদ ব্ল্যাক আউট বা ক্লাসিফায়েড করে রেখেছে।
জুন ১৭, ১৯৩০ সনে একটি উল্কা পতন হয়েছিল ওকলাহমাতে, দেখতে ডিস্কের মতন তখন থেকে ফ্লাইং সসার (Saucer) নামটি চালু হয়। এরপর থেকে মানুষ বিভিন্ন দেশে উড়ন্ত বস্তু দেখতে শুরু করে যেগুলি একটি চ্যাপ্টা ফুটবলের মতো দেখতে।
আমেরিকা ফুটবলকে বলে সকার (Soccer)। কিন্তু ১৯৫৩ সনে মাইকেল কনরাড হলিউডে ফ্লাইং সকার না বলে পিরিচের মতো "ফ্লাইং সসার" নাম দিয়ে সিনেমা মুক্তি দিলে সবার মুখে ফ্লায়িং সসার নামটি চালু হয়ে যায়।
কিন্তু বৈজ্ঞানিকরা বহু লোকের চোখে দেখা এই বস্তুটি কি তা বুঝতে না পেরে এর নাম ধীরে ধীরে হয়ে যায় অপরিচিত উড়ন্ত বস্তু, ইংরেজিতে আন আইডেন্টিফাইড ফ্লায়িং অবজেক্ট, সংক্ষেপে ইউএফও। এখন এই নামটিই গ্রহণ করেছে সবাই।
কেন এই উড়ন্ত বস্তুটি অপরিচিত-- আন আইডেন্টিফাইড? কারো কাছে গ্রহণ যোগ্য কোন জবাব নেই। অধিকাংশ লোকের জবাব এটি হয়তো একটি এলিয়েন ফ্লাইং ভেহিকেল। লক্ষণীয় ব্যাপার হলো এরা কখনো মানুষদের জন্য ক্ষতিকারক নয়, মারমূখী নয়। তাহলে এই অবজেক্ট কি হতে পারে?
গত নব্বুই বছর ধরে মানুষ মনে করে তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশে ইউএফও দেখছে একই চেহারায়। কিন্তু মুসলিম শরীফে কোরআন পাঠের লাভের উপর একটি হাদিস পড়তে গিয়ে মনে হলো হুজুর পাক (স) এর সময় সাহাবী উসায়দ ইবনু হুযায়র (রা) আকাশে যা দেখেছিলেন, তা ঠিক আমেরিকান ফাইটার পাইলটদের বর্ণনার মতো এবং অন্য মানুষদের দেখা ইউএফও,র মতো। হাদীসটি দেখুন।
"আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত,
একরাতে উসায়দ ইবনু হুযায়র তার ঘোড়ার আস্তাবলে কুরআন মাজীদ পাঠ করছিলেন। এমন সময় তার ঘোড়া লাফঝাপ দিতে শুরু করল। তিনি (কিছুক্ষণ পর) পুনরায় পাঠ করতে থাকলে ঘোড়াটিও পুনরায় লাফঝাপ দিতে শুরু করল। (কিছুক্ষণ পর) তিনি আবার পাঠ করলেন এবারও ঘোড়াটি লাফ দিল।
উসায়দ ইবনু হুযায়র বলেন- এতে আমি আশঙ্কা করলাম যে, ঘোড়াটি (শায়িত ছেলে) ইয়াহইয়াকে পদপিষ্ট করতে পারে। তাই আমি উঠে তার কাছে গেলাম। হঠাৎ আমার মাথার উপর আকাশে তাঁবুর মত কিছু দেখতে পেলাম। তার ভিতরে অনেকগুলো প্রদীপের মত জিনিস আলোকিত করে আছে। অতঃপর এগুলো উপরের দিকে শূন্যে উঠে গেল এবং আমি আর তা দেখতে পেলাম না।
তিনি বলেছেন, পরদিন সকালে আমি রসূলুল্লাহ (সা)-এর কাছে গিয়ে বললাম, হে আল্লাহর রসুল! গতকাল রাতে আমি আমার ঘোড়ার আস্তাবলে কুরআন মাজীদ পাঠ করছিলাম। এমতাবস্থায় আমার ঘোড়াটি হঠাৎ লাফঝাপ দিতে শুরু করল। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ (সা) বললেন, হে ইবনু হুযায়র! তুমি পাঠ করতে থাকতে।
আমি পাঠ করে সমাপ্ত করলাম। ইয়াহইয়া ঘোড়াটির পাশেই ছিল। তাই ঘোড়াটি তাকে পদদলিত করে ফেলতে পারে আমি আশঙ্কা করলাম (এবং এগিয়ে গেলাম)। তখন আমি মেঘপুঞ্জের মত কিছু দেখতে পেলাম যার মধ্যে প্রদীপের মত কোন জিনিস আলো দিচ্ছিল। এটি উপর দিকে উঠে গেল এমনকি তা আমার দৃষ্টির আড়াল হয়ে গেল।
রসূলুল্লাহ (সা) এসব শুনে বললেন, ওসব ছিল মালায়িকাহ (ফেরেশতাগণ)। তারা তোমার কুরআন শ্রবণ করছিল; তুমি যদি পড়তে থাকতে তাহলে ভোর পর্যন্ত তারা থাকত। আর লোকজন তাদেরকে দেখতে পেত। তারা লোকজনের দৃষ্টির আড়াল হত না।"
(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১৭৪৪)। হাদিসের মান- সহিহ হাদিস।
আরব দেশের মরুভূমিতে বেদুইনরা বিভিন্ন স্টাইলের তাবু টানায়। হজরত উসায়েদের তাঁবু আরেক বর্ণনায় ক্যানপির মতো দেখতে আকাশে ভাসমান অবজেক্টটি মেঘপুঞ্জের মতো ছিলো অর্থাৎ কালো রংয়ের আবার তার ভেতর থেকে আলোর বিচ্ছুরণ তারপর দ্রুত গতিতে উপরে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া, বর্ণনাটি হুবুহু পেন্টাগনের স্বীকৃতি প্রাপ্ত ইউএফও'র বর্ণনার মতো।
ইউএফও নিয়ে এই অথেন্টিক হাদীসের বর্ণনা ছাড়া আর কোন তথ্য পৃথিবীতে কোনো বিজ্ঞানীর কাছে নেই। আনলেস আদার ওয়াইজ প্রুভড নবী (স) এর দেয়া জবাবটি "মালায়িকাহ"- ফেরেস্তার দল সবচেয়ে বিজ্ঞানময়।
নবী (স) এর হাদিস ও কোরআন থেকে জানা যায় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ফেরেশতাদের যেকোনো আকৃতি ধারণের শক্তি দিয়েছেন। তাই ফেরেশতারা কখনো কখনো ভিন্ন আকৃতিতেও আসেন। মূলতঃ আট ধরনের ফেরেস্তাদের মধ্যে কোন দল হয়তো এভাবেই ঘুরতে আসে আল্লাহর তৈরি পৃথিবী নামের গ্রামীন গ্রহটিতে তাদের কোন ধরনের ডিউটি করতে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষ বানিয়ে ফেরেস্তাদেরকে বলেছিলেন আদমকে সেজদা করো। তাই হয়তো এখনো, মানুষকে দেখলে তাঁরাও ফ্লাইং পাস্ট করে সন্মান জানিয়ে উড়ে যায়। এজন্যেই হয়তো ইউএফও বা ফেরেস্তার দল কখনো মানুষদের আক্রমন করেনা, শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে।
সবশেষে বলবো, আল্লাহ তার সৃষ্টির সবকিছুর মধ্যে তাঁকে খুঁজতে বলেছেন, আমরা খুঁজলাম। বাকি আল্লাহ গাফুরুর রাহিমই ভালো জানেন।