হজরত আমর ইবনে আবাসা রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি নিজেকে ইসলামের ৪ ভাগের এক ভাগ বললেন। কী আশ্চর্য! তিনি আবার কীভাবে ইসলামের ৪ ভাগরে এক ভাগ হলেন? হ্যাঁ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করলেন তখন তিনিই ৪র্থ ব্যক্তি যিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিবারের বাইরে স্বাধীন ব্যক্তি হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং গোলাম হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু পরে তিনি বিশ্বনবির কাছে কালেমা পড়ে মুসলমান হয়েছিলেন।
বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে ওজু করার নিয়ম শেখাতে গিয়ে ওজুর অসাধারণ ফজিলত বর্ণনা করেছেন। মানুষের গোনাহ মাফের আশ্চর্য ঘোষণা রয়েছে বর্ণনায়-
হজরত আমর ইবনে আবাসা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমাকে ওজু শেখান।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘যখন তোমার সামনে ওজুর পানি আসবে, প্রথমে কুলি করবে। তারপর নাকে পানি দেবে ও নাক ঝেড়ে নেবে। সে সময় চেহারা, মুখ ও নাকের গোনাহসমূহ ঝরে যাবে। তারপর যখন আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক মুখমণ্ডল ধুয়ে নেবে, তখন পানির সঙ্গে দাড়ির আগা দিয়ে চেহারার গোনাহগুলো ঝরে যাবে।
তারপর যখন উভয় হাত কনুইসহ ধুয়ে নেবে তখন আঙুলের আগা দিয়ে দুই হাতের গোনাহসমূহ ঝরে যাবে। তারপর যখন মাথা মাসেহ করবে তখন চুলের আগা দিয়ে মাথার গোনাহগুলো ঝরে যাবে। অতঃপর যখন টাখনুসহ দুই পা ধুয়ে নেবে তখন উভয় পায়ের আঙুলের আগা দিয়ে পায়ের গোনাহগুলো ঝরে যাবে।
এরপর বান্দা (ওজু করা ব্যক্তি) যদি নামাজে দাঁড়ায় এবং আল্লাহর শান মোতাবেক হামদ, ছানা ও তার গুণগান বর্ণনা করে, অন্তরকে (দুনিয়ার) সবকিছু থেকে খালি করে শুধুমাত্র আল্লাহমুখী হয়ে যায়, তাহলে সে নামাজ শেষ করার পর সদ্য জন্ম নেয়া নবজাতক শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। (সুবহানাল্লাহ)’
হজরত আমর ইবনে আবাসা রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে এ হাদিস শুনে হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘হে আমর ইবনে আবাসা! আপনি কী (ফজিলত) বলছেন, একবার ভেবে দেখুন! এভাবে একবার নামাজ পড়লেই বান্দা এ ফজিলত পেয়ে যাবে?
এবার সাহাবি হজরত আমর ইবনে আবাসা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘হে আবু উমামা! আমার বয়স হয়েছে, মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এসেছে। এ অবস্থায় কীসেরআশায় আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামে মিথ্যা বলতে যাব?
আমি যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এ (ফজিলতের) কথাগুলো একবার দুই বার তিনবার সাতবার না শুনতাম, আমি তা বর্ণনা করতাম না। আমি তো এ কথাগুলো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ থেকে এর চেয়েও বেশি বার শুনেছি।’ (মুসলিম, মুসতাদরেকে হাকেম)
উল্লেখিত হাদিসে কুরআনুল কারিমে ঘোষিত ওজু ফরজ হওয়ার আয়াতের ওপর যথাযথ আমল করার ব্যাপারে বণির্ত। কুরআনের এ আয়াতে ওজুর চারটি ফরজ বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা নামাজে দাঁড়াও (দাঁড়ানোর ইচ্ছা পোষণ কর) তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ধুয়ে নেবে, কনুইসহ উভয় হাত ধুয়ে নেবে, মাথা মাসেহ করবে, টাখনুসহ উভয় পা ধুয়ে নেবে।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৬)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের জন্য মহান আল্লাহর অফুরন্ত রহমত হলো, শুধু মাত্র ওজুর ফরজগুলো যথাযথ আদায় করে একান্ত মনে নামাজ পড়লেই ওই বান্দা হয়ে যাবে সদ্য জন্ম নেয়া নবজাতকের মতো নিষ্পাপ। মুমিন বান্দার জন্য এ ছোট্ট আমলে নিজেকে নিষ্পাপ করে নেয়ার চেয়ে বড় সৌভাগ্য আর কী হতে পারে?
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ওজুর ফরজগুলো যথাযথভাবে আদায় করে প্রতিটি অঙ্গের গোনাহ থেকে মুক্ত হওয়ার তাওফিক দান করুন। ওজু পরবর্তী একনিষ্ঠ নামাজ আদায়ে নিজেকে নিষ্পাপ বান্দায় পরিণত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।