পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণের কারণে কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি বেড়ে বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছাতে না পারলেও নদী তীরবর্তী চর ও নিচু এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে শতাধিক মাছের ঘের, শাকসবজির খেত ও ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। একইসঙ্গে নদীর দু’পাশের রক্ষা বাঁধগুলো চরম ঝুঁকিতে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) গোমতী নদীর কুমিল্লার দেবীদ্বার ও বুড়িচং উপজেলার বেশ কিছু বাঁধঘেঁষা এলাকা সরেজমিন পরিদর্শনে যান পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা। দেবীদ্বার পৌর এলাকার বালিবাড়ি, হামলাবাড়ি, বারেরারচর, খলিলপুর এলাকার বাঁধ পরিদর্শনের সময় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হোসেন জানান, “আমরা আগে মাঠে খেলাধুলা করতাম, এখন তা নদীতে বিলীন। গত ৩ দিনে পানি অনেক বেড়েছে। ঘূর্ণীপাক বাঁধের একেবারে গায়ে এসে লেগেছে। এখন বাঁশঝারেই পানি আটকে আছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বাঁধ ভেঙে বিপর্যয় নেমে আসবে।”
পাউবো’র উপসহকারী প্রকৌশলী মো. শরিফুল ইসলাম জানান, “গোমতী নদীর পানি বর্তমানে বিপদসীমার নিচে থাকলেও আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পানি ছিল ৭.৪৮ সেন্টিমিটার, যেখানে বিপদসীমা ১১.৩০ সেন্টিমিটার।”
পরিদর্শনে আসা পাউবো কুমিল্লা অঞ্চলের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান খান বলেন, “বারেরারচর এলাকায় ঘূর্ণিপাক বাঁধ সংলগ্নে এসেছে, বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। পানি শুকিয়ে গেলে ১৭৫ কেজি ওজনের জিও ব্যাগ দিয়ে বাঁধ প্রতিরক্ষার কাজ শুরু করব।”
দেবীদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল হাসনাত খাঁন জানান, “বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে।”
পাউবো কুমিল্লা অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালী উজ্জামান বলেন, “পানি বাড়লে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেব। পানি কমে গেলে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধে জিও ব্যাগ ফেলে মেরামতের কাজ করব। তবে জিও ব্যাগ দিয়ে সংস্কার তখনই সম্ভব যখন স্রোত কম থাকবে, না হলে স্রোতে ব্যাগগুলো ভেসে যাবে।”
স্থানীয়দের দাবি, নদীর চরের মাটি কেটে ডাইভারশন রোড তৈরির কারণে বাঁধ দুর্বল হয়েছে এবং অনেক রোড ইতিমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।