প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৫, ১২:২৮
ইসলামে শুক্রবারকে একটি মর্যাদাপূর্ণ দিন হিসেবে গণ্য করা হয়। কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী, এটি সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন এবং ‘সপ্তাহের ঈদ’ হিসেবে বিবেচিত। পবিত্র কুরআনে সূরা জুমআর মাধ্যমে এ দিনের গুরুত্ব সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। হাদীসে এসেছে, ‘সূর্য ওঠা সেরা দিন শুক্রবার, এই দিন আদম (আ.) কে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এই দিনেই কেয়ামত সংঘটিত হবে।’ (সহীহ মুসলিম)
জুমআর দিনে মুসলমানদের ওপর বিশেষ কিছু করণীয় নির্ধারিত রয়েছে। এদিন গোসল করা, পরিষ্কার পোশাক পরা, মসজিদে আগেভাগে যাওয়া, খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং নামায আদায় করা প্রত্যেক বালেগ পুরুষ মুসলমানের দায়িত্ব। নবী করিম (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমআর দিন গোসল করে, উত্তমভাবে পোশাক পরে, দ্রুত মসজিদে যায় এবং ইমামের নিকটে বসে মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনে, তার একটি জুমআ অন্য জুমআর মধ্যবর্তী গুনাহসমূহের কাফফারা হয়ে যায়।” (সহীহ বুখারী)
শুক্রবারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো সূরা কাহফ পাঠ করা। রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমআর দিনে সূরা কাহফ তিলাওয়াত করে, তার জন্য দু’জুমআর মধ্যবর্তী সময় আলোকিত হয়ে যায়।” (হাকেম)। এ ছাড়াও এই দিনে বিশেষ দোয়ার একটি মুহূর্ত রয়েছে, যেখানে যা চাওয়া হয়, আল্লাহ তা কবুল করেন বলে হাদীসে উল্লেখ আছে।
জুমআর খুতবার গুরুত্বও অনস্বীকার্য। এটি শুধুমাত্র উপদেশ নয় বরং এটি জুমআ নামাজের অপরিহার্য অংশ। খুতবার মাধ্যমে মুসলমানদের সামাজিক ও ধর্মীয় নানা বিষয়ে সচেতন করা হয়। তাই খুতবার সময় কথাবার্তা বলা, মোবাইল ব্যবহার করা কিংবা মনোযোগ না দেওয়া মারাত্মক গোনাহ।
শুক্রবারের ফজিলতের কারণে এই দিনে বিশেষ করে দান-সদকা করার তাগিদ রয়েছে। নবীজি (সা.) বলেছেন, “জুমআর দিনে সদকা করা অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি প্রতিদান বয়ে আনে।” তাই এই দিনে গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন সহজ হয়।
এ দিনে কিছু বর্জনীয় কাজের দিকেও আমাদের দৃষ্টি দেওয়া উচিত। যেমন—বাজারে ঘুরে বেড়ানো, অবহেলায় নামাজ ফেলে দেওয়া কিংবা জুমআর নামাযে অনুপস্থিত থাকা ইত্যাদি জিনিস এই দিনের ফজিলত থেকে মানুষকে বঞ্চিত করে। বিশেষ করে যারা ব্যবসার কাজে ব্যস্ত হয়ে জুমআর নামাজ বাদ দেন, তাদের জন্য রয়েছে কড়া সতর্কবাণী।
সবশেষে বলা যায়, জুমআর দিন আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য এক বিশেষ নিয়ামত। এই দিনে আমরা যেন আত্মশুদ্ধি, ইবাদত-বন্দেগি এবং মানুষের কল্যাণে মনোনিবেশ করি, এটাই হওয়া উচিত একজন সচেতন মুসলমানের লক্ষ্য। নিয়মিতভাবে জুমআর মর্যাদা রক্ষা করলে আমাদের সমাজ-জীবনে শান্তি ও নৈতিকতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।