যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে চীনের দিকে ঝুঁকছে সৌদি আরব

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার ১৫ই জুন ২০২৪ ০৯:৫৩ অপরাহ্ন
যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে চীনের দিকে ঝুঁকছে সৌদি আরব

যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ধীরে ধীরে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে সৌদি আরব। ওয়াশিংটনের সঙ্গে রিয়াদের দীর্ঘ কয়েক দশকের মাখামাখি সম্পর্কের লাগাম যেন হঠাৎই টেনে ধরলেন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।


তরুণ এই যুবরাজ ক্ষমতা হাতে পেয়েই দেশের ভেতর যেমন ঝড় তুলেছিলেন, তেমনি বহির্বিশ্বেও আলোড়ন তোলেন। সাংবাদিক খাশোগিকে হত্যা ও লাশ গুমের ঘটনায় যুবরাজ মোহাম্মদের সম্পৃক্ততা পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রিয়াদের দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়। এখন শোনা যাচ্ছে, সেই শূন্যস্থান দখল করছে অন্য কেউ।


দশকের পর দশক তেল বিক্রি করে কাড়ি কাড়ি ডলার কামিয়েছে সৌদি আরব। কিন্তু যুবরাজ মোহাম্মদ ক্ষমতায় বসার পর চাইছেন তেল বিক্রির ব্যবসা থেকে বেরিয়ে আসতে।


জানা গেছে, তেল বিক্রি করতে ডলার ছেড়ে চীনের ইউয়ানের দিকে ঝুঁকছে রিয়াদ। বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরে গিয়ে পূর্ব এশিয়ামুখী হচ্ছে রিয়াদ। যদিও বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়েই বলছেন, ঘটনা অন্যরকমও হতে পারে।


গেল মার্চে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, ভবিষ্যতে বেইজিংয়ের সঙ্গে কিছু লেনদেন চীনের মুদ্রায় করার চিন্তাভাবনা করছে সৌদি আরব। ১৯৭৪ সাল থেকে তেল রপ্তানি প্রায় পুরোটাই ডলারে করে আসছিল রিয়াদ। বিশ্লেষকদের মতে, ধুঁকতে থাকা চীনা মুদ্রাকে সাহায্য করতে এবং ওয়াশিংটনকে একটি বার্তা দিতে এমনটা করতে চাইছেন যুবরাজ মোহাম্মদ। সত্যিকার অর্থে এমনটা ঘটলে এটা বেইজিংয়ের জন্য অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিজয় হবে।


ব্রিকস নিউজ জানিয়েছে, ১৯৭৪ সালে করা ওয়াশিংটন ও রিয়াদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। দেশটি এখন ভিন্ন ভিন্ন মুদ্রায় তেল বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছে।


এক টুইট বার্তায় ব্রিকস নিউজ জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সৌদি আরবের ৫০ বছর পুরোনো পেট্রোডলার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এ নিয়ে নতুন কোনো চুক্তিও হয়নি। তাই সৌদি আরব এখন থেকে ডলারের পাশাপাশি চীনা আরএমবি, ইউরো, ইয়েন ও ইউয়ানসহ বিভিন্ন মুদ্রায় তেল বিক্রি করবে।


অনেক বিশ্লেষকের মতে, বৈশ্বিক জ্বালানি বাণিজ্যে এটা বড় ধরনের পরিবর্তন। আর যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীতে গ্লোবাল সাউথ যে শক্তিশালী অর্থনৈতিক শক্তি হয়ে উঠছে, এটা তারও একটা নমুনা। আসলে আনুষ্ঠানিকভাবে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তেল নিয়ে এমন কোনো চুক্তি কখনই ছিল না।


এনার্জি ওয়াচার আরনড বারট্রান্ড বলেছেন, আমি সত্য বলে মেনে নিতে চাইলেও পেট্রোডলারের ৫০ বছরের চুক্তির মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি বানানো।


এটা সত্য যে, ১৯৭৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব আলোচনায় বসেছিল। তবে সেটা ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওপর রিয়াদের নেতৃত্বাধীন তেল নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য। কিন্তু তখন ৫০ বছরের আনুষ্ঠানিক কোনো চুক্তি হয়েছিল, এমন প্রমাণ নেই।


যুবরাজ মোহাম্মদ দৃশ্যপটে আসার পর সৌদি আরব চীন ও রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ হয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে। বিশেষ করে ক্ষমতায় বসেই ইয়েমেনের হুতিদের সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যা মেনে নিতে পারেননি যুবরাজ মোহাম্মদ।