১০ই মহরম বা আশুরা কি ?

নিজস্ব প্রতিবেদক
ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার ৮ই আগস্ট ২০২২ ০৯:৫০ পূর্বাহ্ন
১০ই মহরম বা আশুরা কি ?

মুহাররম ও আশুরার অর্থ 


আরবী বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মহাররম মাস। মহররাম শব্দের অর্থ অলঙ্ঘনীয়পবিত্র। মহাররম মাসের দশম তারিখ আশুরা নামে সু-পরিচিত। আরবী আশারাশব্দ থেকে আশুরার উৎপত্তি। আশারা মানে দশ, আর আশারাকেই বিশেষ সম্মানসহকারে ‘আশুরা’ বলা হয় বলে ধারণা করা হয়।


পৃথিবীর সৃষ্টির শুরু থেকেই ১০ই মহাররম তথা আশুরার একটি বিশেষ ভুমিকাপরিলক্ষিত হয়ে আসছে। এ মাসে রয়েছে অনেক বিজয় আর গৌরবমাখা ঐতিহ্যেরস্মৃতি।


মহরম বা আশুরা  নিয়ে কিছু কথা- মহররম হিজরী বছরের প্রথম মাস।এ মাসের কথা উল্লেখ রয়েছে পবিত্র কুরআনে। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে সূরা তাওবার ৩৬ নং আয়াতে বর্ণিত যেমাসগুলোতে যুদ্ধ-বিগ্রহ হারাম করা হয়েছে তার মধ্যে মহররম অন্যতম । বহুবিধ কারণে এ মাসটি মুসলিম উম্মাহের কাছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ । স্বয়ং আল্লাহর রাসুল (সাঃ) নিজে এ মাসকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বর্ণনা করেছেন । তিনি বলেছেন, ‘রমজানের পরে সর্বোত্তম রোজা হলো আল্লাহর প্রিয় মহররম মাসের সাওম এবং ফরজ নামাজের পর সর্বোত্তম সালাত হল রাতের নামাজ’ । 


অন্যদিকে মানবতার মুক্তির দিশারী, সকল নবী-রাসুলদের নেতা এবং আমাদের পথ প্রদর্শক হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ধরাবাসীর প্রতি তার দায়িত্ব অর্থ্যাৎ মানুষকে শান্তির ধর্ম ইসলামের পথে আহ্বানের শুরু করেছিলেন মহররম মাসে । পবিত্র কুরআনে আরবী ১২ মাসের মধ্যে মহরম, রজব, জিলক্বদ ও জিলহজ্জ মাসকে বিশেষভাবে সম্মানিত করা হয়েছে এবং কুরআনের জীবন্ত ব্যাখ্যা গ্রন্থ অর্থ্যাৎ বিভিন্ন হাদিস শরীফে এ মাসগুলোর স্বতন্ত্র ফযিলত বর্ননা করা হয়েছে । মহররম মাসের ১০ তারিখ গোটা মুসলিম বিশ্বের কাছে পবিত্র আশুরা নামে পরিচিত । আশুরা ও মুহররম শব্দদ্বয় শ্রবণের সাথে সাথে আমাদের মানসপটে ভেসে ওঠে এক ভয়ংকর, বীভৎস, নিষ্ঠুর, নির্মম ও ইসলামের ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক ঘটনা । 


রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নয়নের পুতুলী, কলিজার টুকরা, খাতুনে জান্নাত নবীনন্দিনী হযরত ফাতেমা (রাঃ) এর আদরের দুলাল হযরত হোসাইনের কারবালার প্রান্তরে শাহাদাতের মর্মন্তুদ ঘটনা; যা এ পৃথিবীর এক করুণ ইতিহাস । বিশ্বের সকল মুসলিম নরনারী আজও ধর্মীয় রীতিনীতির মাধ্যমে দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় স্মরণ করে । হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ওফাতের মাত্র পঞ্চাশ বছর পর ফোরাতের তীরে কারবালার কংকরময় প্রান্তরে মুহাম্মদ (সাঃ) এর অন্যতম প্রিয় দৌহিত্র হযরত হোসাইন (রাঃ) স্ব-পরিবারে তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে মোয়াবিয়া পুত্র ইয়াজিদের হাতে শাহাদাৎ বরণ করেন । 


এ অধ্যায়কে ইসলামের ইতিহাস আজও বেদনার রক্তদিয়ে লেখা রয়েছে । তবে কারবালার এ করুন ট্র্যাজেডির পরেই ইসলাম নবরূপে আত্মপ্রকাশ করেছে বলেই ইসলামী স্কলারদের বিশ্বাস । তাদের মতে ‘কারবালার ত্যাগের পরেই ইসলাম জিন্দা হয়েছে’ । কারবালাই মুসলমানদের শিক্ষা দিয়ে গেছে, মর্সিয়া কিংবা ক্রন্দন নয় বরং ত্যাগ চাই । মুসলামানদের কাছে আশুরার ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও তাৎপর্য ব্যাপক । 


প্রিয় নবী (সাঃ) অতি আদরের দৌহিত্র হযরত হোসাইন (রাঃ) ফোরাতের উপকূলে ইয়াজিদ বাহিনী কর্তৃক আহলে বাইতসহ কারবালার কংকরময় প্রান্তরে শাহাদাতের ঘটনাকেই আমরা মহররম ও আশুরার একমাত্র ঐতিহাসি ঘটনা বলে মনে করে থাকি । মূলত আশুরার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের সাথে শুধু কারবালার নিষ্ঠুরতার ঘটনাই জড়িত নয় বরং কারবালার আহলে বাইতের শাহাদাতের ঘটনা আশুরার শেষ ও চূড়ান্ত হৃদয়বিদারক ঘটনা মাত্র । ইসলামের ইতিহাস অনুসারে এ দিনটি নানা কারনে গুরুত্বপূর্ণ ।


 এ দিনটি একটি পবিত্র দিন কেননা এ দিনেই আসমান ও যমিন সৃষ্টি করা হয়েছিল । এই দিনে পৃথিবীর প্রথম মানুষ হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে । ১০ই মহররম আল্লাহ নবীদেরকে স্ব স্ব শত্রুর হাত থেকে আশ্রয় প্রদান করেছেন । এই দিনে নবী মুসা (আঃ) এর শত্রু ফেরাউনকে নীল নদে ডুবিয়ে দেয়া হয় । হযরত নুহ (আঃ) এর কিস্তি ঝড়ের কবল হতে রক্ষা পেয়েছিল এবং তিনি জুদি পর্বতশৃঙ্গে নোঙ্গর ফেলেছিলেন এই দিনেই । 


এই দিনে হযরত দাউদ (আঃ) এর তওবা কবুল হয়েছিল, নমরুদের কবল থেকে হযরত ঈব্রাহীম (আঃ) উদ্ধার পেয়েছিলেন, হযরত আইয়ুব (আঃ) দূরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্ত ও সুস্থতা লাভ করেছিলেন । এদিনে হযরত ঈসা (আঃ) কে আল্লাহ তায়ালা উর্ধ্বাকাশে উঠিয়ে নিয়েছিলেন ।


 হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে যে ‘১০ই মহররম কেয়ামত সংগঠিত হবে’ (আল হাদীস) ।হিজরী ৬০ সনে পিতার মৃত্যুর পর ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়া নিজেকে মুসলিম বিশ্বের খলিফা হিসাবে ঘোষণা করে । অথচ ইয়াজিদ প্রকৃত মুসলমান ছিল না বরং মোনাফেক ছিল । সে এমনই পথভ্রষ্ট ছিল সে ইসলামে চিরতরে নিষিদ্ধ মধ্যপানকে সে বৈধ ঘোষণা করেছিল । অধিকন্তু সে একই সাথে দুই সহোদরাকে বিবাহ করাকেও বৈধ ঘোষণা করেছিল । শাসক হিসেবে সে ছিল স্বৈরাচারী ও অত্যাচারী । এ সকল কারণে হযরত হোসাইন (রাঃ) শাসক হিসেবে ইয়াজিদকে মান্য করতে অস্বীকৃতি জানান এবং কূফাবাসীর আমন্ত্রন ও ইসলামের সংস্কারের লক্ষ্যে মদীনা ছেড়ে মক্কা চলে আসেন । 


এখানে উল্লেখ্য যে, উমাইয়াদের শাসনামালে ইসলাম তার মূল গতিপথ হারিয়ে ফেলেছিল । হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) মক্কা থেকে কুফার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন । শেষ পর্যন্ত তিনি কারবালার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন । এ সময় উমর ইবনে সা’দ আবি ওক্কাসের নেতৃত্বে চার হাজার সৈন্য কারাবালায় প্রবেশ করে । কয়েক ঘন্টা পর ইসলামের জঘন্য দুশমন শিমার ইবনে জিলজুশান মুরাদির নেতৃত্বে আরো বহু নতুন সৈন্য এসে আবি ওক্কাসের বাহিনীর সাথে যোগ হয় । অবশেষে বেজে ওঠে যুদ্ধের দামামা । 


এ যুদ্ধ সত্য এবং মিথ্যার দ্বন্ধের অবসান ঘটানোর সংগ্রাম । কারবালায় দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয় । নানা নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে যুদ্ধ শুরু হয় । এই অসম যুদ্ধে ইমাম হোসাইন (রাঃ) এবং তার ৭২ জন সঙ্গী শাহাদৎ বরণ করেন । শিমার ইবনে জিলজুশান মুরাদি নিজে ইমাম হোসাইনের কণ্ঠদেশে ছুড়ি চালিয়ে তাকে হত্যা করে । আর সে বেদনাহত দিনটা ছিল হিজরী ৬১ সালের ১০ই মহররম । (তথ্যসূত্র-উইকিপিডিয়া)