সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা।ঘরে ঘরে চলছে এখন দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা।আর কিছুদিন পরেই শুরু হতে যাওয়া দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় মন্দিরগুলোকে প্রতিমা তৈরির পর চলছে শেষ মুহুর্তে রংয়ের কাজ। আর তাইতো প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পা করছেন মৃৎশিল্পীরা।তারা দিন রাত পরিশ্রম করে আপন মনে নিপুণ হাতে তৈরি করেছে মা দেবী দুর্গাকে।করোনা পরিস্থিতিতে যেনো স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত না হয় সে ব্যাপারেও প্রস্তুতি রেখেছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, গত বুধবার (৬ অক্টোবর) মহালয়া শুরু হয়েছে। এরপর ১১ই অক্টোবর ষষ্ঠী তিথিতে পূজার মূল পার্বন শুরু হয়ে ১৫ অক্টোবর দশমী তিথিতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সব থেকে বড় এ ধর্মীয় উৎসব। পুরাণ অনুযায়ী দুর্গা শব্দের অর্থ অপ্রতিরোধ্য অর্থাৎ তাকে কেউ পরাজিত করতে পারে না। এ বছর মহাষষ্ঠীতে এই মহামায়া দশভূজা দেবী দুর্গার আগমন ঘটবে ঘোটকে(ঘোড়ায়) করে এবং পূজার সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে দোলায়(দোলনা) চড়ে কৈলাশে ফিরবেন।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, রাজবাড়ী জেলা শাখা সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রাজবাড়ী জেলায় মোট ৪৪১ টি মন্দিরে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এরই ধারবাহিকতায় গোয়ালন্দ উপজেলাতে ২১টি মন্দিরে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন মন্দির ঘুরে দেখা যায়, শিল্পীদের নিপুন হাতে চলছে প্রতিমা তৈরির শেষ মুহুর্তের কাজ।নিখুঁতভাবে মনের মাধুরি মিশিয়ে কারিগররা ফুটিয়ে তুলেছেন দেবী দুর্গাকে। পাশাপাশি চলছে লক্ষী, স্বরস্বতী, গণেশ ও কার্তিক, অসুর, সিংহ, মহাদেবসহ প্রতিমা তৈরির কাজ।
উপজেলার পৌর এলাকায় গোয়ালন্দ বাজার স্বার্বজনীন পূজা মন্দিরে গেলে প্রতিমা তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায় অমল পাল কে। আলাপকালে তিনি বলেন, আমি ৪৫ বছর যাবত এই প্রতিমা তৈরির কাজ করছি।আমার বাপ-দাদও প্রতিমা তৈরির কাজ করতো।মৌসুম এলেই কাজের চাপ বেড়ে যায়,তাছাড়া সারা বছর বসেই থাকতে হয়। এ বছর আমি ১২ টি মন্দিরের প্রতিমা তৈরির কাজ পেয়েছি। প্রতিমা প্রতি ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা নিচ্ছি। তবে করোনার কারণে সবাই মজুরিও কম দিচ্ছে।
প্রতিমা শিল্পী অমরেশ কুমার পাল, কুমারেশ পাল, জানান, এবছর এক একজন ভাস্কর ৪ থেকে ৮ টি করে প্রতিমা তৈরি করছেন। পূঁজা শুরুর দিন পর্যন্ত রঙ-এর কাজ করতে হবে তাদের। তবে করোনাকালীন চাহিদার তুলায় মজুরি কম পাচ্ছেন তারা। সেই সঙ্গে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ বাজারে পরিশ্রমের পর প্রতিমা তৈরি করে যে মজুরি পান তা দিয়ে জীবন যাপন করা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। অনেকেই এ পেশা ছেড়ে চলে গেলেও তারপরেও বাপ দাদার আদি পেশা টিকিয়ে রাখছেন তারা।
গোয়ালন্দ মুক্তিযোদ্ধা ভবন এর পাশে অবস্থিত গোয়ালন্দ বাজার সার্বজনীন পূজা মন্দিরের সভাপতি সংকর দাস বলেন, আমাদের মন্দিরে প্রতি বছরই শারদীয় দুর্গা পূজা উদযাপন হয়।এবছর ও হচ্ছে। এখন প্রতিমা তৈরির শেষ মুহুর্তের কাজ চলছে। গত বছর করোনার কারণে সীমিত করা হয়, এবছর ও করোনা পরিস্থিতির কারণে সীমিত করা হবে।জেলা পূজা উদযাপন কমিটি থেকেও আমাদের কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবথেকে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। আসন্ন শারদীয় দূর্গাপূজা ২০২১ উপলক্ষে পূজার এ বিষয়কে কেন্দ্র করে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা জোড়দার করার নিমিত্তে গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা যেন ভালো থাকে এবং মানুষ যেন নির্বিগ্নে পূজার আনন্দ উদযাপন করতে পারে সে লক্ষে আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি। এ বিষয়ে আমার গোয়ালন্দ পূজা উদযাপন পরিষদ কমিটির সাথে আলোচনা করেছি। এছাড়াও স্থানীয় সেচ্ছাসেবকদের কে সচেতন করা হয়েছে পাশাপাশি পুলিশ ও অনন্যা সংস্থা মিলে সুন্দর পরিবেশে সকল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দূর্গাপূজা উৎযাপন করতে পারে সে ব্যাপারে আমরা সর্বদা প্রস্তুত রয়েছি।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।