মহামারি করোনার মধ্যে আবারো ভার্চুয়াল বৈঠক করলো বিএনপির নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি। এতে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্পর্কে সরকারি দল ‘সুপরিকল্পিতভাবে মিথ্যা অপপ্রচার’ করছে বলে অভিযোগ করেছে দলটি।দলের পক্ষ থেকে রবিবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বৈঠকের কথা তুলে ধরেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি জানান, বৈঠকে ১২টি বিষয় নিয়ে আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত হয়।
গতকাল শনিবার রাতের বৈঠকে স্থান পাওয়া আলোচনা ও সিদ্ধান্তের বিষয়গুলো জানাতে গিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচনের আগের রাতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতা দখলকারী সরকার যখন করোনাভাইরাসের সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছে, যখন সরকারের চরম উদাসীনতায় লাখো মানুষের জীবন ও জীবিকা হুমকির সম্মুখীন হয়েছে, হাজারও মানুষ ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য প্রাণ হারাচ্ছে, যখন সরকারি দলের লুটেরাদের দুর্নীতির কারণে অর্থনীতি ধ্বংসের মুখে, রাষ্ট্রর সব প্রতিষ্ঠান দলীয়করণ ও দুর্নীতির কবলে পড়ে দুঃশাসন সৃষ্টি করেছে, জনগণের আস্থা যখন শূন্যের কোঠায়, তখন জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সুপরিকল্পিত মিথ্যাচার এক গভীর ষড়যন্ত্র।’
ফখরুল বলেন, ‘কয়েকটি ইলেক্ট্রনিক চ্যানেল সরকারের নির্দেশে সম্পূর্ণ বিকৃত, বিকারগ্রস্ত মানসিকতায় তথা কথিত নাটক নামে পরিবেশন তারই একটি অংশ।’বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘খালেদা জিয়ার দীর্ঘ নয় বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ায় তার যে অবদান সেটা জাতি সব সময় শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার সঙ্গে মনে রেখেছে। তাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে পরাজিত করা যাবে না।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘তারেক রহমানকে নির্যাতন করে পঙ্গু করার অপচেষ্টা, মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাসিত করে তার ভাবমূর্তিকে হেয় করা যাবে না। দেশের সকল স্বাধীনতাকামী, গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছে এই দুঃসময়ে এই ভয়ংকর গণতন্ত্রহীন সংকটে নেতৃত্বের আশার আলোর দিশারী তারেক রহমান। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার তাকে তার লক্ষ্য অর্জনে বাধা দিতে পারবে না।’
ফখরুল বলেন, ‘দলের স্থায়ী কমিটির সভায় পরিকল্পিত মিথ্যা অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ প্রদর্শনের জন্য দলের অঙ্গসংগঠনসমূহ ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষকদল, জাসাস, মুক্তিযোদ্ধা দল, সকল জেলার বিএনপি ও অঙ্গসমূহ কেন্দ্রীয় নির্দেশ অনুযায়ী কর্মসূচি পালন করবে। একইসঙ্গে সভা, সেমিনার, ওয়েবিনার, ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠানের আয়োজন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশনা দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।’বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সভায় বিএনপির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্বহীন মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। বিএনপি কোনো ষড়যন্ত্রে বিশ্বাস করে না। জনগণের ভালোবাসা ও সমর্থনে বিশ্বাসী বিএনপি।’
ফখরুল বলেন, ‘পাবনা-৪ আসনে উপনির্বাচন আবারও প্রমাণ করেছে যে, এই নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনার যোগ্য নয়। তারা সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে।’ সংবাদ সম্মেলনে এই নির্বাচনকে বাতিল করে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানানো হয়।এছাড়া সভায় ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করা হয় বলে জানা গেছে।
ফখরুল জানান, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন এখনো চূড়ান্তভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক অনুমোদন পায়নি। বেশ কয়েকটি দেশে উদ্ভাবন ও পরীক্ষার কাজ চলছে। বিএনপি মনে করে ভ্যাকসিন সংগ্রহ ও বিতরণের ক্ষেত্রে কোনো রকম রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থও যেন সাধারণ মানুষের ভ্যাকসিন প্রাপ্তিতে কোনো ব্যাঘাত না ঘটায় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানানো হয় এবং জনগণ যেন কোনো ব্যয় ব্যতিরকেই এই ভ্যাকসিন পেতে পারে তার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারকে আহ্বান জানানো হয়।এছাড়াও বৈঠকে যেকোনো ধরনের ইতিহাস বিকৃতিকে রুখে দেয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।