দণ্ডপ্রাপ্ত ফেরারি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে যুক্তরাজ্য থেকে ফিরিয়ে আনতে কাজ করবে নতুন সরকার। একইসঙ্গে নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমাদের বিবৃতি নিয়েও সরকার চিন্তিত নয়। গতকাল মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সক্রিয় অংশীদারির মাধ্যমে পররাষ্ট্র নীতির লক্ষ্যগুলোর অর্জনের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। অর্থনৈতিক কূটনীতি ও আঞ্চলিক সম্পর্ক জোরদারেরও গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন তিনি। গত সোমবার নতুন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরদিন মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তাঁরা এসব কথা বলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের সবার সক্রিয় সহযোগিতা, অংশীদারি প্রয়োজন। আমাদের সবার সমর্থন প্রয়োজন। সক্রিয় উদ্যোগ প্রয়োজন। বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতাও আমাদের প্রয়োজন।' সাংবাদিকদের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মতবিনিময়কালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। সরকার সব দেশের সঙ্গেই এই বন্ধুত্ব অব্যাহত রাখবে।
ড. এ কে আবদুল মোমেনকে তাঁর যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বের বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি ওই নাগরিকত্ব ফেরত দিয়েছেন বলে জানান। অতীতে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নেওয়ার প্রোপট তুলে ধরে তিনি বলেন, বিদেশে জীবনের এক কঠিন সময়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পেয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিচারিক তাঁকে বলেছিলেন, ‘আপনি রাষ্ট্রহীন হতে পারেন, কিন্তু গৃহহীন ও কর্মহীন হতে পারেন না। এদিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, আগামী দিনগুলোতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যু গতি পাবে। তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে ইতিপূর্বে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, এটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকবে কি না? জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই এটি আমাদের অগ্রাধিকারের বিষয়। আমরা আইনের শাসন নিশ্চিত করতে চাই বাংলাদেশে। এ জন্য সরকার অনেক কঠিন পদক্ষেপ নিয়েছে, কঠোর হয়েছে সরকার। বিচার বিভাগের সিদ্ধান্ত আমরা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেছি অক্ষরে অক্ষরে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার, বঙ্গবন্ধুর কয়েকজন খুনিকে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, সেগুলোর ধারাবাহিকতায় বিদেশের মাটিতে বসে বাংলাদেশের বিরূদ্ধে মিথ্যাচার, হেয় করার চেষ্টা-এ ধরনের ব্যক্তিকে আমরা অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করব। নির্বাচন নিয়ে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর বিবৃতির পার্থক্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শাহরিয়ার আলম বলেন, অতীতে নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর যে ধরনের বিবৃতি দেখা যেতো এবার কিন্তু দেখা যায়নি। এর কারণ বিগত সরকারের কর্মকাণ্ড।
তিনি বলেন, এবারও নির্বাচনের আগে যে ছোট খাটো সংঘাত, সমস্যা হয়েছে সেগুলোও অতীতের নির্বাচনের তুলনায় অনেক কম। আমাদের বন্ধুরাষ্ট্রগুলো সেটি বুঝেই সেভাবে তাদের বিবৃতি দিয়েছেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে বা যাবে এবং এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা কিন্তু সবার বিবৃতিতেই আছে। তার মানে আমরা সবার কাছে আস্থার জায়গা তৈরি করতে পেরেছি। পশ্চিমাদের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগের ঘাটতি ছিল কিনা জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম বলেন, বছরের এ সময়ে পশ্চিমা অনেক দেশে দুই-তিন সপ্তাহে কার্যত ছুটি থাকে। সীমিত জনবল দিয়ে কার্যক্রম চলে। সে কারণে তাদের তথ্যের ঘাটতি থাকতে পারে। তবে সরকার আগামী দিনগুলোতে অবশ্যই এ বিষয়ে কাজ করবে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'আমরা মনে হয় না, স্টেটমেন্ট (বিবৃতি) নিয়ে চিন্তার কিছু আছে। তারপরও এটা তো ‘ওয়াটার টাইট’ (কোনো ধরনের বিভ্রান্তির সুযোগ না থাকা) হওয়ার কথা ছিল। কোনো কিছুই বলার কথা ছিল না।' তিনি বলেন, 'মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া, পশ্চিমে, পূবে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আবার একই সঙ্গে জাতিসংঘে, জেনেভায়, ব্রাসেলসে আমরা আমাদের অবস্থান আরো শক্তিশালী করতে চাই। আমরা চাই, বাংলাদেশকে আমাদের বন্ধু রাষ্ট্রগুলো আরো ভালোভাবে বুঝুক। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নতুন সরকারের আমলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি জনশক্তি পাঠানোর বিষয়টিও অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখার কথা জানান।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।