প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২৫, ১০:৫৭
কোটা সংস্কার আন্দোলনের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ১৮ জুলাই ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম রক্তাক্ত দিন। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ, রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা ও ইন্টারনেট বন্ধের মতো নজিরবিহীন পরিস্থিতি তৈরি হয়। দিনভর চলা সহিংসতায় নিহত হন অন্তত ৩১ জন, আহত হন দেড় হাজারেরও বেশি। ঢাকায় ২৪ জনের মৃত্যু ঘটে, যার মধ্যে শিক্ষার্থী ছিলেন ১১ জন। চট্টগ্রাম, নরসিংদী, রংপুর, সাভার ও মাদারীপুরেও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
রাজধানীর রামপুরা, মহাখালী, মিরপুর, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকাকে রণক্ষেত্রে পরিণত করে আন্দোলনকারীরা। বিটিভি ভবন ও সেতু ভবনে অগ্নিসংযোগের ফলে বিটিভির সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। উত্তরা-পূর্ব থানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে সারা দেশে ২২৯ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয় এবং রাজধানীতে সব সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে ডিএমপি।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে টোল প্লাজা, মিরপুরে পুলিশ বক্স এবং মেরুল বাড্ডায় শিক্ষার্থীদের ধাওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের সদস্যরা কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটিতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন এবং পরে হেলিকপ্টারে করে উদ্ধার করা হয়। শুধু ঢাকাতেই নয়, দেশের ৪৭টি জেলাজুড়ে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ ঘটে।
সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনার প্রস্তাব এলেও আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা তা প্রত্যাখ্যান করেন। আন্দোলনকারী আসিফ মাহমুদ সজীব বলেন, গুলির সঙ্গে কোনো সংলাপ হয় না। নাহিদ ইসলাম সরকারের সহিংসতার জন্য তাদেরই দায়ী করে বলেন, শহীদের রক্তের ওপর কোনো আলোচনা হতে পারে না।
এইদিনই আন্দোলন চলাকালীন ঢাবি ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী পদত্যাগ করেন এবং দেশের বিভিন্ন জেলায় ছাত্রলীগের আরও ২৪ জন নেতা দল ছাড়েন। ফায়ার সার্ভিস জানায়, দেশের ২৫টি স্থানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে ঢাকাতেই ১৫টি। ক্ষতিগ্রস্ত হয় সরকারি অফিস, বাস, মোটরসাইকেল, থানাসহ অনেক স্থাপনা।
জাতিসংঘও এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানায়, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মানবাধিকার। সরকারের উচিত তা রক্ষা করা। অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দাবি করে, এই সহিংসতার নেপথ্যে রয়েছে বিএনপি-জামায়াতের প্রশিক্ষিত ক্যাডার বাহিনী, যারা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
সারাদেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলো অবরোধ করে আন্দোলনকারীরা একযোগে বিক্ষোভ করে। রাজশাহী, সিলেট, পঞ্চগড়, কক্সবাজারসহ বহু শহরে বড় আকারের বিক্ষোভ হয়। এ পরিস্থিতিতে হাইকোর্টে লিভ টু আপিলের শুনানির দিন ধার্য করা হয় এবং পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।