প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২৫, ১১:৪৪
মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৬০০ জনের বেশি মানুষ। সংঘাতের কেন্দ্রস্থল সুয়েইদা প্রদেশে ড্রুজ ও বেদুইন গোষ্ঠীর মধ্যে সৃষ্ট বিরোধ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং তা রূপ নেয় রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে, যেখানে সরকারি বাহিনী, স্থানীয় যোদ্ধা ও বেসামরিক নাগরিক সবাই আক্রান্ত হয়।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানায়, নিহতদের মধ্যে অন্তত ৩০০ জন ড্রুজ সম্প্রদায়ের মানুষ, যাদের মধ্যে ১৪৬ জন ছিলেন সশস্ত্র যোদ্ধা এবং বাকি ১৫৪ জন সাধারণ মানুষ। সরকারি বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন অন্তত ৮৩ জন। পাল্টা হামলায় ড্রুজ যোদ্ধারাও বেদুইনদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, এতে নিহত হয় আরও কয়েকজন বেদুইন বেসামরিক।
সংঘর্ষে সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর ২৫৭ জন সদস্য এবং ১৮ জন বেদুইন যোদ্ধা প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানা গেছে। এদিকে সিরিয়ার অন্য একটি পর্যবেক্ষক সংস্থা দাবি করেছে, সহিংসতায় অন্তত ১৬৯ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। তবে সরকারি বাহিনী এখনো পর্যন্ত পুরো চিত্র নিশ্চিত করেনি, যদিও তাদের হিসেবে মৃতের সংখ্যা ৩০০’র কাছাকাছি।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ইসরায়েল এই সহিংসতার সুযোগে সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর অবস্থানে বিমান হামলা চালায় এবং এতে নিহত হন আরও ১৫ জন সেনা। ইসরায়েল দাবি করে, তারা ড্রুজদের সুরক্ষার স্বার্থে এই হামলা চালিয়েছে। তবে এই হস্তক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শহরের রাস্তায় লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে এবং বহু ঘরবাড়ি লুটপাট ও ধ্বংসের শিকার হয়েছে। সুয়েইদায় আপাতত অস্থায়ী শান্তি বিরাজ করলেও জনগণের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে এবং অনেক এলাকায় সেনা সদস্যদের অবস্থান নেই।
ড্রুজ সম্প্রদায়ের একজন প্রভাবশালী নেতা শেইখ হিকমত আল-হাজরি জানান, তারা সরকারবাহিনীকে প্রদেশ থেকে হটিয়ে দেওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবেন। অন্যদিকে, সম্প্রদায়ের একাংশ ইসলামপন্থি প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরির চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে।
এই সংকটের মধ্যেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন, দক্ষিণ সিরিয়ায় সরকারি বাহিনী প্রবেশ করলে তার দেশ চুপচাপ বসে থাকবে না। ড্রুজদের ক্ষতি হওয়া রোধে প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
এই সংঘর্ষ সিরিয়ায় চলমান রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক বিভাজনের নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যেখানে একদিকে জাতিগত পরিচয় নিয়ে সংঘাত, অন্যদিকে আঞ্চলিক শক্তিগুলোর হস্তক্ষেপ—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল ও রক্তক্ষয়ী হয়ে উঠছে।