প্রকাশ: ১২ মে ২০২৫, ১০:৪
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই সিদ্ধান্তের ফলে দলটি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ হারাতে পারে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সরকারি গেজেট হাতে পাওয়ার পর কমিশনের সভায় বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব বেগম জেসমিন টুলি জানিয়েছেন, একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলে, সেটি আর কমিশনের কাছ থেকে কোনো সুবিধা পাবে না। এমনকি ব্যালট পেপারেও ওই দলের প্রতীক বরাদ্দ হবে না। ফলে আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, গেজেট প্রকাশের পরপরই কমিশনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বহাল থাকবে কি না। তিনি বলেন, বর্তমান সময় ও দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখেই কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।
নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ বলেছেন, দলীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলে নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি আইন পর্যালোচনা করেই ঠিক করা হবে। এ বিষয়ে কমিশনের একাধিক সদস্য ও সংশ্লিষ্ট আইনবিদদের মতামত নেওয়া হবে।
এদিকে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন, আওয়ামী লীগ পুরোপুরি নিষিদ্ধ হতে চলেছে। তিনি বলেন, এতবড় অপরাধ ও মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের পর তাদের নির্বাচনী রাজনীতিতে টিকিয়ে রাখা জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার সামিল।
আইন অনুযায়ী, কোনো দল সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে নির্বাচন কমিশন তাদের নিবন্ধন বাতিল করতে পারে। যদিও বর্তমান সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগকে ‘নিষিদ্ধ’ বলা হয়নি, বরং বলা হয়েছে দলটির ‘কার্যক্রম বন্ধ’ করা হয়েছে। ফলে নিবন্ধন বাতিল হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে কমিশনের ব্যাখ্যা ও আইন প্রয়োগের ওপর।
অন্যদিকে, সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংশোধনের মাধ্যমে দল বা সত্তার কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার স্পষ্ট বিধান যুক্ত করা হয়েছে। সংশোধিত আইন অনুযায়ী, সরকার যদি কাউকে সন্ত্রাসে যুক্ত বলে বিশ্বাস করে, তাহলে তাকে বা তার প্রতিষ্ঠানকে সরকারি গেজেটে তালিকাভুক্ত করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে। এই সংশোধনী ইতোমধ্যে গেজেটে প্রকাশিত হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আওয়ামী লীগ ও তাদের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে চলমান বিচারকাজ এবং দেশের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তারা আশাবাদী, আন্তর্জাতিক মহল এই সিদ্ধান্তে কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখাবে না। সরকারের মতে, একটি ‘খুনি, গণতন্ত্রবিরোধী ও দুর্নীতিগ্রস্ত’ দলের পক্ষে বিশ্ব সমাজ দাঁড়াবে না।
এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে চলেছে, যা শুধু নির্বাচনের গতিপথ নয়, গোটা রাজনৈতিক সংস্কৃতিকেই নতুন মোড় দিতে পারে।