বরিশালের বাকেরগঞ্জে কথিত ধর্ষণের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার ৪ নাবালক শিশু আসামিকে নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে মাইক্রোবাস যোগে ওই ৪ শিশুকে বাকেরগঞ্জের রুনশী গ্রামে নিয়ে আসেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। মাইক্রোবাস থেকে নামার সাথে সাথে শিশুদের বুকে টেনে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। এ সময় সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্বজনদের কাছে ওই ৪ শিশুকে বুঝিয়ে দেয়ার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাধবী রায়, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রবেশন অফিসার সাজ্জাদ পারভেজ, বাকেরগঞ্জ থানার ওসি আবুল কালামসহ প্রশাসনের স্থানীয় কর্মকর্তারা।
এর আগে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বরিশালের শিশু আদালত ওই ৪ শিশুকে জামিন দেন। এরপর রাতেই বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের সহকারী পরিচালককে তাদের মুক্তির জন্য বার্তা প্রেরণ করেন। মেইল বার্তা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে মাইক্রোবাসযোগে ৪ শিশুকে নিয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জের উদ্দেশে যাত্রা করেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
গত মঙ্গলবার রাতে কথিত ধর্ষণ মামলার ১নম্বর আসামী মোঃ সাইদুল বয়াতীর আপন চাচা জাহিদুর রহমান বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বাকেরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় অন্যান্য আসামীরা হলো সালাম হাওলাদারের ছেলে সোলায়মান হোসেন তামিম (১০), বাবুল সিকদারের ছেলে মো. হাফিজুল ইসলাম লাবিব (১০) ও শাহিন হাওলাদারের ছেলে মো. শাওন হাওলাদার (১০)। এদের প্রত্যেকের বাড়ি জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের রূনসী গ্রামে। এদিকে মামলার সূত্র ধরে ওই চার শিশুকে গ্রেফতার করে বুধবার দুপুরে বরিশাল সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। বুধবার সন্ধ্যায় নাবালক ওই ৪ শিশুকে প্রিজনভ্যানে তোলার সময় হৃদয় বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয় আদালত পাড়ায়। কথিত ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত চার শিশুর চিৎকারে প্রত্যক্ষদর্শীরাও চোখের পানি ফেলেছেন।
শিশু সাইদুলের পিতা বেল্লাল বয়াতী জানান, ‘আমার ভাই রুবেলের সাথে জমি-জমা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দ্বন্দ্ব চলছিল। এ নিয়ে একাধিকবার সালিশ বৈঠকও হয়েছে। তবে হাইকোর্টের নির্দেশে তার সন্তান ফিরে পাওয়ায় সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মামলার বাদী রুবেল ও গ্রেফতার হওয়া শিশুদের পিতার সাথে জমি-জমা নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ চলছে। সে কারনে এ ধরনের মামলা হতে পারে বলে মনে করেন তারা।মো. হাফিজুল ইসলাম লাবিব পিতা বাবুল সিকদার সিকদার বলেন, এ ধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনা যেন দ্বিতীয়বার আর না ঘটে এজন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ করেন তিনি।
রঙ্গশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বশির উদ্দিন বলেন, ঘটনাটি ধর্ষণ নয়। ধর্ষণ সাজানো হয়েছে। মূলত বাদী ও বিবাদীর পরিবার আপন চাচা-ভাতিজা। উভয় পক্ষের মধ্যে ১৫ শতাংশ জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে অসংখ্যবার শালিস আমি নিজেও করেছি। পুরানো শত্রুতার জের ধরে এই মামলা হয়েছে বলেন তিনি। ইউপি সদস্য নাজমা বেগম বলেন, ধর্ষণ হয়েছে বলে আমার কাছে কোন তথ্য নেই। অথচ আমি তাদের প্রতিবেশী।
এ বিষয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ডাঃ অসীম কুমার সাহা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, দশ বা এগারো বছরের শিশু কখনোই ধর্ষণ করতে পারেন বলে আমার অভিজ্ঞতায় এবং চিকিৎসা শাস্ত্র পড়তে গিয়ে পাইনি। বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজল ঘোষ মনে করেন, পরিণত ধর্ষকদের বিরুদ্ধে যখন আন্দোলন চলছে তখন কেউ কেউ ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধার করতে এসব অভিযোগ করছেন।