প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২১:২২
লাল শাপলার নৈসর্গিক সৌন্দর্যকে ঘিরে বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলায় পর্যটন শিল্পের যে সম্ভাবনা গড়ে উঠেছিল অযতœ অবহেলা আর পরিকল্পনার অভাবে সেই সম্ভাবনা ফিঁকে হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। অথচ উজিরপুরের সাতলা বিলে ফুটন্ত কোটি কোটি লাল শাপলা রূপসী বাংলার অপরূপ ও মনোমুগ্ধকর দৃশ্য প্রকৃতি প্রেমিকদের মন কেড়েছিল। ইন্টারনেটের বদৌলতে যা দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও পরিচিতি পায়। যার ধারাবাহিকতায় তৎকালীন বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার ইয়ামিন চৌধুরী উজিরপুরের লাল শাপলার বিল পরিদর্শনকালে স্থানটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার কথা জানিয়েছিলেন।
পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে আড়াই কোটি টাকার একটি প্রকল্পের প্রস্তাবনাও পাঠানো হয়েছিল পর্যটন মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে সেই প্রকল্পে ভাটা পড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে। তবে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গৃহীত প্রকল্পসমূহের মধ্যে এই শাপলা বিল সম্পর্কিত কোন প্রকল্প পাওয়া যায়নি। অবশ্য করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে অবকাঠামোগত কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক এস.এম অজিয়র রহমান। অপরদিকে বিল এলাকায় বিশ্রামাগার, ওয়াসরুম, আবাসিক ও খাবার হোটেল এবং গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য কোন ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে দর্শনার্থীদের।
বরিশালের উজিরপুর উপজেলার হারতা, সাতলা কিংবা আগৈলঝাড়ার বাঘদা গ্রামে লাল শাপলার বিলে রুপসী বাংলার অপরূপ সৌন্দর্য দেখা যায়। মনোমুগ্ধকর লাল শাপলার বিল দেখতে প্রতি বছর পর্যটকদের আনাগোনা দেখা যায়। বিলের শান্ত জলে ডিঙ্গি নৌকা। এতে আসন পেতে ঘুরে বেড়ান পর্যটকরা, উপভোগ করেন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিখ্যাত বিস্তৃত লাল শাপলার বিলে গত বছরগুলোর তুলনায় চলতি মৌসুমে অনেক কম শাপলা ফুটেছে। জলবায়ু পরিবর্তন, জলাশয় ভরাট করে বাড়ি, পুকুর নির্মাণ, মাছের ঘের তৈরি, কৃষি জমিতে উচ্চমাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ, স্লুইজগেট দিয়ে বিলাঞ্চলে সময়মত পানি না উঠানোর কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
তাছাড়া লাল শাপলার বিলে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা পলিথিনজাতকরণ করা বিভিন্ন খাবার যেমনঃ চিপস্, বিস্কিট, প্লাস্টিক পানির বোতল, সিগারেটের প্যাকেট ইত্যাদি বিলের মধ্যে ফেলছে। যা ভবিষ্যতে শাপলার প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস করবে। কেননা পলিথিনের কারণে পরিবেশ নষ্ট হয়, মাটির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পায়। এছাড়া দর্শনার্থীদের প্রায় প্রত্যেকেই বিলের মধ্যে নৌকা নিয়ে গেলেও মাঝখানে গিয়ে ইচ্ছেমতো শাপলা তুলে ফটোশেসনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। স্থানীয়রা জানান, বোরো মৌসুমে কৃষকদের ধান কাটার পর বর্ষায় স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালীরা বিলে মাছ চাষ করেছেন। তাছাড়া শাপলা মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক নামী-দামী লোকজন গাড়ির বহর নিয়ে লাল শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন। তারা নৌকা ভরে শাপলা তুলেন। কেউবা আবার মাথায় গামছা দিয়ে শাপলা বোঝাই করে মাথায় নিয়ে ছবি তুলেন। এতে শাপলার উৎপাদন কমে যাওয়ার আশংকা করছেন তারা।
করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবেন তারা। তবে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রস্তাবিত প্রকল্পের তালিকায় উজিরপুরের লাল শাপলার বিল এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (পর্যটন-১) শামীম নাসরীন সদ্য যোগদান করায় তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না জানিয়ে পর্যটন (২) এ যোগাযোগ করার জন্য বলেন। উপ-সচিব (পর্যটন-২) শ্যামলী নবীর সাথে যোগাযোগ করা হলে এ সম্পর্কিত কোন প্রস্তাবের বিষয়ে তিনি কোন তথ্য জানেন না বলে জানিয়েছেন।