'পুলিশি নির্যাতনে' কলেজ ছাত্রের কিডনি বিকল, ঘটনার তদন্তের নির্দেশ
যশোরে পুলিশ সদস্যদের মারপিটে ইমরান হোসেন নামে এক কলেজ ছাত্রের দুটি কিডনি নষ্ট হওয়ার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। যুগ্ম জেলা জজ পদ মর্যদার নিচে নয় এমন একজন বিচারককে দিয়ে ঘটনাটি তদন্ত করার জন্য যশোরের জেলা ও দায়রা জজকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একইসাথে তদন্ত কমিটিকে ৬০দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। সোমবার (৬ জুলাই) রিট আবেদনের শুনানী শেষে বিচারপতি জেবিএম হাসানের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. হুমায়ুন কবির পল্লব ও ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওছার। এ দুই আইনজীবী গত ১৮ জুন পুলিশি প্রহারে শিক্ষর্থী ইমরানের কিডনি নষ্টের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত, ক্ষতিপূরণ ও তার চিকিৎসার ব্যয় চেয়ে এ রিট দায়ের করেন।
রিট আবেদনে বলা হয়, গত ৮ জুন যশোর সদর উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামে আনছার আলীর ছেলে ইমরান হোসেনকে সাজিয়ালী পুলিশ ফাঁড়ির দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ কয়েক পুলিশ সদস্য তাকে আটক করে বেদম মারপিট করে। এতে সে অচেতন হয়ে পড়ে। পরে স্থানীয় একটি ফার্মেসিতে নিয়ে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরবর্তীতে মাদক দিয়ে চালানের ভয় দেখিয়ে তার পিতার কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়। এ সময় তাকে মারপিটের কথা কাউকে না জানাতে বলে। অন্যথায় আবার ধরে এনে মারপিটের হুমকি দেয়। বাড়িতে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়ে ইমরান। হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা জানান তার দুটি কিডনিই কাজ করছে না। গত ৯ জুন বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।
রিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, যশোরের পুলিশ সুপার, যশোরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশের মহাপরিদর্শক, যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং যশোরের সিভিল সার্জনকে রিটে বিবাদী করা হয়।
এরপর হাইকোর্ট গত ২৩ জুন ভিকটিমের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে একটি রিপোর্ট দাখিলের জন্য যশোরের সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। একইসঙ্গে এই ঘটনা তদন্তে পুলিশের গঠিত তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটির কোনও রিপোর্ট তৈরি হয়ে থাকলে, তা দাখিল করতে বলা হয়েছিল। সে সব আদেশের ধারাবাহিকতায় গত ২৮ জুন দুটি প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়। পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে ওই কলেজ শিক্ষার্থীকে মাদকসেবী উল্লেখ করা হয়। এরপর গত ২৮ জুন যশোরের সিভিল সার্জনকে ভিকটিমের ডোপ টেস্ট করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
রিটকারী আইনজীবী মো. হুমায়ুন কবির বলেন, আজ সোমবার দাখিল করা ডোপ টেস্টের রিপোর্টে জানা গেছে, ইমরান মাদকাসক্ত নন। তবে সিভিল সার্জন মতামত দিয়েছেন যে, বিভিন্ন হাসপাতালে তার চিকিৎসাধীন থাকা এবং এখনো ওষুধ সেবন করছেন বলে ইমরানের ডোপ টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে বলে প্রতীয়মান হয়। এমন মতামত সিভিল সার্জন দিতে পারেন না বলে শুনানিতে বলেছি। সেই সঙ্গে পুলিশের নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের আরজি জানিয়েছি। সার্বিক বিবেচনায় আদালত ওই ঘটনা বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।