বাড়ির কেয়ারটেকার থেকে শত কোটি টাকার মালিক শামিম

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শনিবার ২২শে ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৬:৪০ অপরাহ্ন
বাড়ির কেয়ারটেকার থেকে শত কোটি টাকার মালিক শামিম

ছিলেন বাড়ীর কেয়ারটেকার, হয়েছেন অঢেল সম্পদের মালিক। পিতৃকুল, মাতৃকুল ও শ্বশুরকুলে তেমন কোনো সম্পদ না থাকলেও নিলামে কিনেছেন দক্ষিন এশিয়ার বৃহত্তম আদমজী জুটমিলের একাংশ। রাজধানীর ধানমন্ডির কেয়ারী তাজে রয়েছে তিন কোটি টাকা মূল্যের বিলাসবহুল ফ্লাটে। 

তিনি রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে নির্মাণ করেছেন অত্যাধুনিক ছাত্রী হোস্টেল। পাশেই রয়েছে তার ছাত্রদের মেস। প্রক্রিয়াধিন রয়েছে ইউনিভার্সিটি শপিংমল। তড়িৎ গতিতে এগিয়ে চলছে রংপুরে ইবনেসিনা ডায়াগনস্টিক, কনসালটেন্ট ও মেডিকেল সেন্টার। দুবাইয়ে রয়েছে ব্যবসা। ছেলেকে আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের দুবাই ক্যাম্পাসে ভর্তিও করেছেন। ঘনঘন দুবাই যাতায়াত করেন স্বপরিবারে। এসব কিছুই করছেন নিজস্ব অর্থায়নে। তিনি হলেন গাইবান্ধা জেলার নদী বিধৌত এলাকার ময়নুল ইসলাম শামীম। 

জানা যায়,  সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মায়ের দিনাজপুরস্থ বাড়ীর বিশ্বস্থ তত্ত্বাবধায়ক। তার এসব সম্পদের উৎস ও দুবাইভিত্তিক ব্যাবসার অনুসন্ধান দাবী করছেন স্থানীয়রা। জানাযায়, শামীম তার সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি ও অঢেল সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে হাতিয়ে নিয়েছেন স্বাধীনতা বিরোধীদের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান ইবনে সিনার পরিচালকের পদ। তিনি পরিচালক হয়ে সম্পদ করেননি বরং বিশাল সম্পদের মালিক হয়েই পরিচালক হয়েছেন।

এছাড়াও রয়েছে তার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে একটি বহুতল অত্যাধুনিক মার্কেট নির্মাণের পরিকল্পনা সে অনুযায়ী জমিও কিনেছেন। কিছু দিনের মধ্যে বহুতল মার্কেট নির্মাণের কাজ শুরু করবেন। তার রয়েছে নামে-বেনামে শত কোটি টাকার সম্পদ। দেশের টাকা পাচার করে দুবাইয়ে বাড়ি কিনেছেন বলেও তার ব্যবসায়িক সূত্র জানান।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, পিতৃকূল, মাতৃকূল ও শ্বশুরকূলের তেমন কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম খুজে পাওয়া যায়না, যার কোন বিশাল সম্পদ রয়েছে। উল্লেখিত ব্যক্তিদ্বয়ের কারোরই নেই কোন বিশাল ভূসম্পত্তি, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানা। এরপরেও সেই রূপকথার কল্পকাহিনীকে হার মানিয়েছে। যেমন আলাউদ্দিনের চেরাগ অথবা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বা সাগরচুরি, এসব কিছুকে ছাপিয়ে পাহাড়সম সম্পদ গড়েছেন ময়নুল ইসলাম শামীম। তিনি জন্ম গ্রহণ করেছেন গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার বন্যা কবলিত নদী ভাঙ্গন এলাকার নিভৃত পল্লী জুমার বাড়ির ইউনিয়নের থৈকরের পাড়া গ্রামে। তার পিতা মাওলানা সিদ্দিক হোসেন একজন স্কুল শিক্ষক। তারও তেমন কোন পৈতৃক সম্পত্তি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বা শিল্প কারখানা কোন কালেই ছিলোনা। শামীমের সম্পদের তালিকা ক্রমশ দীর্ঘায়ীত হচ্ছে।

রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলাসহ প্রায় প্রতিটি উপজেলাতে নামে বেনামে টার্কি মুরগীর খামার করেছেন। সেগুলো রক্ষণা বেক্ষণ করার জন্য বেতনভূক্ত কর্মচারী রেখেছেন। এছাড়াও সম্প্রতি গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্প শুরু করেছেন। তার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তারা জানান, সম্পদের উৎস ও কর ফাঁকি দেয়ার বিষয়টি যদি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ তদন্ত করে তাহলে আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে।

সূত্র মতে এই বিশাল সম্পদ অর্জন করার জন্য ময়নুল ইসলাম শামীম কোনো ব্যাংক লোন করেননি। অতি সম্প্রতি তিনি বিভিন্ন ঝামেলা থেকে নিরাপদে থাকার জন্য ব্যাংক লোন নেয়ার চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপি সরকারে থাকা অবস্থায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মায়ের দিনাজপুরস্থ বাড়ীর তত্ত¡বধায়কের দায়িত্বে ছিলেন শামীম। তত্ত্বাবধায়ক (কেয়ারটেকার)এর বাইরে দেশে বিদেশে তার কোনো ব্যবসা বা চাকুরী ছিলোনা। তিনি প্রায়ই দুবাই যাতায়াত করেন।

এ বিষয়ে তার পাসর্পোট জব্দ করলে অনেক অজানা তথ্য বেরিয়ে আসবে। তার ব্যাবসায়ীক সংশ্লিষ্টদের ধারণা ময়নুল ইসলাম শামীম আন্ডারওয়ার্ল্ড ও মাফিয়াডন সিন্ডিকেটের সাথে জরিত থাকতে পারে। কারণ তার নিজ সন্তানকে আমেরিকান বিশ্ব বিদ্যালয়ের দুবাই ক্যাম্পাসে ভর্তি করেছেন। সে সুবাদে তিনি স্বপরিবারে ঘনঘন দুবাই যাতায়াত করেন।  শামীমের গ্রামের বাড়িতে কথা হয় তার বাবা মাওলানা ছিদ্দিক হেসেনের সাথে। তিনি বলেন, আমার কোনো সম্পদ নেই, টিউশনি করে সন্তানদের লেখা পড়া শিখিয়েছি। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, শামীম সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মাকে নানী ডাকতো সেই সুবাদে আদমজী জুটমিল নিলামে নিয়েছে। আদমজী জুটমিল কেনার সময় শামীম আমাকে সেখানে নিয়ে জায়গা দেখিয়েছে। সে এখন দুবাইয়ের সাথে ব্যবসা করে। কী সেই ব্যবসা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এর বেশি জানেন না বলে জানান।

এসব বিষয়ে শামীমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে সাক্ষতে কথা বলতে চাইলে তিনি সাক্ষাত দিতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, আপনার স্থায়ী ঠিকানা দেন, সেখানে যোগাযোগ করবো আপনি সাংবাদিক কিনা। তিনি উল্টো প্রশ্ন রেখে এ প্রতিবেদককে বলেন,  এতো ভিতরের খবর কিভাবে জানলেন?

ইনিউজ ৭১/এম.আর