সিঙ্গাপুরের টাউন কাউন্সিলে ৯ বছর ধরে কাজ করছেন প্রবাসী বাংলাদেশি রাজীব। সম্প্রতি তিনি কর্মস্থলের গাড়ি পার্কিং করার সময় মানিব্যাগসহ ১০ হাজার ডলার কুড়িয়ে পান। যা বাংলাদেশি টাকায় ৬ লাখের বেশি। এতগুলো টাকা হাতে পেয়েও লোভ রাজীবকে বশিভূত করতে পারেনি।রাজীব চিন্তা করল টাকাগুলো মালিকের কাছে ফেরত দেবে। টাকা ফেরত দেওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি গাড়ি পার্কিংয়ে প্রায় ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা অপেক্ষা করেন। কিন্তু মালিকের সাক্ষাৎ পেলেন না।টাকা হাতে নিয়ে বাসায় ফিরে যান। কিন্তু তার ঘুম হয় না। প্রকৃত মালিকের কাছে টাকাটা ফেরত দেওয়ার জন্য তিনি অস্থির হয়ে যান। তিনি মোবাইল হাতে বসে থাকেন। কারণ ব্লকে কিছু হারিয়ে গেলে হয়ত টাকার মালিক তার বসকে কল দেবে এবং বস তাকে কল দিয়ে টাকার কথা জিজ্ঞেস করবে। কিন্তু কারো কল আসেনি। রাজীব মালিকের কাছে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য অস্থির হয়ে পড়েন।
এরপর দু’দিন কার পার্কে করে মালিকের সন্ধানে বসে থাকেন। তবুও কারো দেখা পাননি। পরে অফিসে বসকে টাকা পাওয়ার ঘটনা বর্ণনা করেন। বস তার কথা শুনে অবাক হন। তিনি বলেন, ‘এতগুলো টাকা তুমি কেন ফেরত দিতে চাও? নিজের কাছেই রেখে দাও।’ কিন্তু রাজীব নাছোড়বান্দা। সে মালিকের কাছে টাকা ফেরত দিতে চায়।বস পরিশেষে তাকে নিয়ে পুলিশ স্টেশনে হাজির হন। পুলিশ সব শুনে অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকেন কিছুক্ষণ। তিনি বলেন, ‘আমার কর্মজীবনে এই প্রথম কাউকে দেখছি এতগুলো টাকা ফেরত দিতে। তোমার ১০ মাসের বেতন এই টাকা। এই টাকা দেশে পাঠিয়ে তুমি কিছু করতে পারতে। কিন্তু তুমি তা না করে ফেরত দিতে আসছ। তোমার সততাকে স্যালুট জানাই।’
পুলিশ টাকার সাথে থাকা পরিচয়পত্র থেকে টাকার মালিকের নম্বরে কল দেন কিন্তু কেউ কল রিসিভ করে না। দ্বিতীয় নম্বরে কল দিলে একজন নারী কল রিসিভ করে বলে, সে টাকার মালিকের বোন। পুলিশের কাছে সব শুনে নারী কেঁদে ফেলেন। তিনি জানান, এই টাকা তার ভাই সংগ্রহ করেছিল তার মায়ের চিকিৎসা করানোর জন্য।ওই নারী বলেন, ‘টাকা হারানোর পর ভাই আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। ভাই ভেবেছে আমি তার টাকা চুরি করেছি। শুধু এই টাকার জন্য ভাই বোন একে অপরের শত্রু হয়েছি।’ সে আনন্দে কেঁদেই ফেলে। তার অশ্রুসিক্ত কথা শুনে রাজিবও আনন্দে কেঁদে ফেলে। তার অনুভব হয়, যাক জীবনে একজনের আনন্দের কারণ হতে পারলাম। এই আনন্দ টাকা দিয়ে কিনতে পাওয়া যায় না।
পরের দিন টাকার মালিক পুলিশ স্টেশন এসে টাকা সংগ্রহ করে রাজীবের বসকে কল করে। রাজীবের বস রাজীবকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ স্টেশন হাজির হয়। টাকার মালিক রাজীবকে জড়িয়ে কেঁদেই ফেলে। তার চোখে-মুখে আনন্দ দেখে সুখানুভূতি অনুভব করে রাজীব। এই সুখ পৃথিবীতে কোটি টাকার বিনিময়ে পাওয়া যায় না। অপরের মুখে হাসি ফোটানো আসলেই খুব আনন্দের আর সেই সুখের পেছনে যখন দেখবেন আপনি তখন পৃথিবীর সেরা সুখানুভূতি অনুভব করবেন।
রাজীবের সততার পুরস্কার স্বরূপ টাউন কাউন্সিলের পক্ষ থেকে সততার সার্টিফিকেট তুলে দেন সিনিয়র স্টেট মিনিস্টার হেং চী হাউ। খবর নিয়ে জানা যায়, রহমত উল্লাহ রাজীব শরীয়তপুর জেলার জাজিরা থানার গফুর মোল্লার কান্দি গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার নাম আবদুল মোতালেব মোল্লা।এ ব্যাপারে রাজীবের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভাই, টাকা-পয়সা আজ আছে কাল নেই। কিন্তু আমি এই যে তাদের মুখে হাসি ফোটাতে পারলাম, এটাই আমার জীবনের সেরা অর্জন। আমি মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। আমি অন্যের মুখে হাসি ফোটাতে চাই। কিন্তু কোনো প্লাটফর্ম পাচ্ছি না।’তিনি আরও বলেন, ‘এর আগেও আমি একজনকে ৫০ গ্রাম স্বর্ণ ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। তখন সে স্বর্ণের মালিক আনন্দে কেঁদেই ফেলেছিলেন। এইযে মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারছি এটাই আমার জীবনের সেরা পাওয়া।’রাজীবের এই সততার খবর সিঙ্গাপুরের কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তাকে বাংলাদেশি হিরো বলে আখ্যায়িত করা হয়। টাকার মালিক তার সততার পুরস্কার স্বরূপ ৪শ ডলার পুরস্কৃত করে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।