নির্মাণ কাজ শেষের আগেই ভেঙে পড়ল ৫ কোটি টাকার সেতুর গার্ডার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: রবিবার ২৯শে সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১০:৪৪ পূর্বাহ্ন
নির্মাণ কাজ শেষের আগেই ভেঙে পড়ল ৫ কোটি টাকার সেতুর গার্ডার

কাজ শেষ হওয়ার আগেই টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে টোক নদীর ওপর প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন বানিয়াপাড়া সেতুর একটি গার্ডার ভেঙে পড়েছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ক্রেন দিয়ে সেতুটির সপ্তম গার্ডার বসানোর সময় তা ভেঙে যায়। নিম্নমানের নির্মাণকাজের কারণেই গার্ডারটি ভেঙে পড়ে দাবি করে এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে দায়ী ঠিকাদারের বিচার দাবি করেছে এলাকাবাসী।

তবে এ ব্যাপারে সেতুটির নির্মাণকাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুর্গা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শ্যামল চন্দ্র সাহার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তিনি বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। 

ঘাটাইলের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রকৌশলী এ কে এম হেদায়েত উল্লাহ জানান, বানিয়াপাড়া ও বাইচাইল গ্রামের সংযোগস্থলে টোক নদীর ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে বানিয়াপাড়া সেতু। ৮১ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৩ দশমিক ৭ মিটার প্রস্থের এই সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা। নির্মাণকাজের মেয়াদ ধরা হয়েছে ৩ বছর। এর মধ্যে গত এক বছরে প্রায় ৬৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। নকশা অনুযায়ী ৯টি গার্ডার বসবে সেতুটিতে। এরই মধ্যে ৬টি গার্ডার বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। গার্ডারগুলোর ঢালাইয়ের কাজ ওপরেই শেষ করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ক্রেন দিয়ে সপ্তম গার্ডারটি বসানোর সময় তা ভেঙে যায়।

এদিকে ভেঙে যাওয়া অংশে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের চিত্র এলাকাবাসীর চোখের দেখায়ই ধরা পড়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই ভেঙে যাওয়া অংশের ছবি তুলে ফেইসবুকে পোস্ট করেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এলাকার বাসিন্দা ইব্রাহিম বলেন, ‘ব্রিজটি নির্মাণে পাথর ও বালির অনুপাতে সিমেন্ট ঠিকমতো দেওয়া হয়নি। এক বস্তা সিমেন্টের সাথে ৭টা বালু ও ৭টা পাথর দেওয়া হয়েছে। এ কাজে কিছু বাংলা রডও ব্যবহার করা হয়েছে, যা এখনো পাশে পড়ে আছে।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘শুরুতে নকশার চেয়ে ব্রিজ দুই ফুট নিচু করেছিল ঠিকাদার। পরে ঢাকা থেকে ইঞ্জিনিয়ার এসে ভুল ধরে সংশোধন করে দেন। ঘাটাইল থেকে যে ইঞ্জিনিয়ার আসে সে পাশে থাকা ঘরে বসে মোরগ আর কবুতরের বাচ্চা খেতে ব্যস্ত থাকে। ঢালাইয়ের অধিকাংশ কাজ সন্ধ্যার সময় ও বৃষ্টির মধ্যে করা হয়েছে। কারণ সে সময় মানুষ ওইখানে যায় না। এ ছাড়া উত্তর পাশে যে গার্ডার বসানো হয়েছে সেটিও ফেটে গেছে।’

নির্মাণকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে নির্মাণকাজের সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক সবুজ গতকাল শনিবার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কৈফিয়ত দেওয়ার মতো মনমানসিকতা আমাদের নেই।’ ঠিকাদার শ্যামল চন্দ্র সাহার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম সম্পর্কে জানতে চাইলে সবুজ বলেন, ‘তিনি প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে বিদেশ আছেন। তার ফোন বন্ধ আছে।’ এলজিইডির প্রকৌশলী এ কে এম হেদায়েত উল্লাহও জানিয়েছেন, ঠিকাদার শ্যামল চন্দ্র সাহা বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে দেশের বাইরে আছেন।

নির্মাণকাজে ত্রুটির বিষয়ে জানতে চাইলে এলজিইডির প্রকৌশলী এ কে এম হেদায়েত উল্লাহ বলেন, ‘মেশিনে সমস্যা থাকার কারণে গার্ডার টেনশনিং করার সময় ফেল করে। যার কারণে গার্ডারটি ভেঙে যায়।’