যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠায় ঝিনাইদহ ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আই,এইচ,টি) ডেন্টাল ইন্সট্রাক্টর কার্ত্তিক গোপাল বিশ্বাসসহ তার তিন সহযোগী পালিয়ে গেছেন। এ নিয়ে আইএইচটির শত শত শিক্ষার্থীর আন্দোলন মুখে গঠিত হয় তদন্ত টিম।
আজ মঙ্গলবার (৩ সেপ্টম্বর) পাঁচ পৃষ্ঠার একটি তদন্ত প্রতিবেদন স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এ খবর নিশ্চিত করেছেন আইএইচটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডাঃ রেজিনা আহম্মেদ।
তিনি জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানের একাধিক ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, রাসুল পাক (সাঃ) কে নিয়ে কটুক্তি, মেয়েদের পর্দার বিরুদ্ধে অবস্থান ও ছাত্রলীগ দ্বারা সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের মানষিক ও শারিরিক নির্যতনের মতো গুরুত্বর অভিযোগ দেয় আইএইচটি’র বর্তমান ও প্রাক্তন প্রায় ৫শতাধিক শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ পেয়ে তদন্ত করে দেখা যায় তাদের সব অভিযোগই সত্য। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ডেন্টাল ইন্সট্রাক্টর কার্ত্তিক গোপাল বিশ্বাস ডেন্টালের ছাত্রীদের শহরের ব্যাপারীপাড়াস্থ তার চেম্বারে ডেকে এনে হাতে কলমে প্রশিক্ষনের নামে যৌন নির্যাতন চালাতেন। যৌন কর্মে লিপ্ত না হলে মৌখিক পরীক্ষায় ফেল ও লিখিত পরীক্ষায় কম মার্ক দেওয়ার কথা বলে একাধিক ছাত্রীর সাথে জোর করে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতেন।
যৌন নির্যাতনের শিকার এমন শতাধীক নারী শিক্ষার্থীর বক্তব্য ও ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন তদন্ত টিম। তাছাড়া কার্তিক গোপাল ক্লাসে নারী শিক্ষার্থীদের পর্দা করার বিষয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে মানহানীকর বক্তব্য দিতেন। তিনি রাসুল পাক সাঃ কে নিয়ে প্রায় ক্লাসে কটুক্তি করতেন।
নারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ কার্ত্তিকের এই অপকর্মে সহায়তা করতেন, আইএইচটির রেডিওগ্রাফার আলমডাঙ্গা উপজেলার সরফরাজ খান সোহাগ। সোহাগ আইএইচটির ক্যাম্পাসে মাদকের স্বর্গ রাজ্য গড়ে তোলেন। এতে অনেক সাধারণ শিক্ষার্থী মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েন।
এদিকে গেষ্ট লেকচারারের কোন পদ নাথাকার পরও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি চাকলাপাড়ার তারিক মোড়ের মাহমুদুল ইসলাম লিওন ক্লাস নেওয়ার নামে নারী শিক্ষার্থীদের কু-প্রস্তাব দিতেন। আউট সোর্সিংয়ে কর্মরত ঝিনাইদহ শহরের হামদহ দাস পাড়ার সুর্য্য দাস লিওনের সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
একাধিক সুত্রে জানা গেছে, কার্ত্তিক গোপাল বিশ্বাসের দ্বৈত নাগরিক রয়েছে। ভারতের নাগরিক হওয়ায় তিনি কাউকে পরোয়া করতেন না। ফলে ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের গোটা সময় ধরে তিনি নানা অপকর্ম করে পার পেয়ে গেছেন। বর্তমান তিনি ভারতে পালিয়ে যাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে আইএইচটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডাঃ রেজিনা আহম্মেদ মঙ্গলবার দুপুরে মুঠোফোন জানান, ছাত্রদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সব ঘটনা তদন্ত করা হয়েছে। প্রায় সব অভিযোগই সত্য বলে প্রমানিত হয়েছে। যৌন নির্যাতনের কিছু ভিডিও ফুটেজও হাতে পেয়েছি। তিনি বলেন এ বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এখন ব্যবস্থা গ্রহন করবে।
উল্লেখ্য ঝিনাইদহ আইএইচটিতে ৫টি ডিপার্টমেন্টে বর্তমানে ৩৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়ণরত রয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর ১২ বছরে শিক্ষা জীবন শেষ করে ৭টি ব্যাচের শির্ক্ষীরা চলে গেছেন। ২০১২ সালে মাত্র ২৫ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে ঝিনাইদহ ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।