নকল লেবেল, হোমিওপ্যাথিক দোকান হতে স্পিরিট এবং ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান হতে বোতলের কর্ক, প্যাকেট, নানা ধরনের সুগন্ধি এবং ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে তৈরি করা মদ বিদেশি ব্র্যান্ডের নামে বাজারজাত করছে একটি চক্র। আর এসব মদ খেয়ে অসুস্থ এবং মারা যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এসব তথ্য জানান সিএমপির উপ-কমিশনার (পশ্চিম) ফারুকুল ইসলাম। তিনি বলেন, সম্প্রতি আকবরশাহ এলাকায় তিনজনের মৃত্যুর পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে এই চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে স্পিরিট, নকল লেভেল, ভেজাল মদ তৈরির বিভিন্ন উপকরণ, বোতলের কর্ক জব্দ করা হয়েছে এবং গ্রেপ্তারকৃতদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
গ্রেপ্তার পাঁচজন হলেন- নাছিম উদ্দিন (২৩), ইকরামুল হক (৩২), স্বপন পাল (৫১), ইমরান ফয়সাল (২১) এবং জাহেদুর রহমান আরজু (৩০)। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কর্মকর্তা ফারুকুল ইসলাম বলেন, অনুমোদিত বিভিন্ন বার ও ক্লাব থেকে বিদেশি মদের খালি বোতল এবং প্যাকেট সংগ্রহ করে ভেজাল মদ ঢুকিয়ে নতুন লেভেল লাগিয়ে বাজারজাত করছে এই চক্রটি। মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় প্রতি বোতল ভেজাল মদ তৈরি করে বিক্রি করা হচ্ছে দেড় হাজার থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত দামে। এসব ভেজাল মদ শরীরে বিষক্রিয়া তৈরি করছে। যার ফলে প্রাণহানি মতো ঘটনাও ঘটেছে। এরা আন্দরকিল্লা ও পাহাড়তলী এলাকা থেকে লেবেল ছাপিয়ে এবং পুরাতন গির্জা ও হাজারি গলি থেকে স্পিরিট কিনে নকল মদ বিক্রি করত।
গত ১৩ আগস্ট রাতে চট্টগ্রামের আকবর শাহ থানার বিশ্বকলোনির মালিপাড়ায় মদ্যপানে তিনজনের মৃত্যু হয়। এরা হলেন- বিশ্বজিৎ মল্লিক, শাওন মজুমদার জুয়েল ও মিল্টন গোমেজ। এছাড়া অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন উজ্জ্বল বণিক নামে একজন। ফারুকুল ইসলাম জানান, তারা চারজন একসঙ্গে বসে মদপান করেছিল। তাদের মধ্যে তিনজন মারা যান। উজ্জ্বল নামে একজন চিকিৎসাধীন রয়েছে। উজ্জ্বলের দেয়া দেওয়া তথ্যমতে পুলিশ অনুসন্ধানে নামে। এরপর একজন বিদেশি মদের খুচরা বিক্রেতাকে আটক করার পর বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ নকল হওয়ার বিষয়ে তথ্য পায় পুলিশ।
তিনি আরও জানান, এই চক্রটি স্বীকার করেছে তারা অধিক লাভের আশায় এই ভেজাল মদ তৈরি করে বিক্রি করছে। বিদেশি ব্র্যান্ডের মদ কম দামে বিক্রি করায় এদের বেশির ভাগ ক্রেতা স্বল্প আয়ের মানুষ। পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, চট্টগ্রাম শহরে এই চক্রটি ছাড়াও আরও চক্র থাকতে পারে। আমাদের এই ভেজাল মদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। সংবাদ সম্মেলনে আকবর শাহ থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, এসব মদ এই চক্রটি মোটরসাইকেলে করে সরবরাহ করে। ৩-৪ বছর যাবৎ চক্রটি এই ভেজাল মদের ব্যবসা করে আসছে। ওসি আরও বলেন, ‘এই চক্রের আরও পাঁচ-ছয় জনের নাম পেয়েছি। তারা স্পিরিট, তিন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ, কোকাকোলা, রঙ, মদের ফ্লেভার আর ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে মদ তৈরি করে। যা মানব শরীরের বিষক্রিয়া তৈরি করে।
ওসি জানান, গ্রেপ্তার নাছিম ও তার এক আত্মীয় মদের ক্রেতাদের কাছে ক্লাব ও বারের প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত। তাই তারা এসব মদের অর্ডার পায় এবং ভেজাল মদ সরবরাহ করে। এদের মধ্যে গ্রেপ্তার ইকরামুল হক স্পিরিট সরবরাহ করে। তাকে ৪২ লিটার স্পিরিটসহ পুরাতন গির্জা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই চক্রটি স্বপন পাল নামে একজন থেকে স্পিরিট কেনে, তাকেও হাজারী গলি থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এরপর ইমরান নামে আরেকজনকে নকল মদের লেবেল ছাপানো ও হেফাজতে রাখার অপরাধে আন্দরকিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জাহেদুর রহমানকে পাহাড়তলী থেকে পিসিসহ নকল লেবেল ছাপানোর অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয়।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।