উখিয়া-টেকনাফের ২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা পরিবার কোরবানির মাংস পাচ্ছে!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ৮ই আগস্ট ২০১৯ ০৫:২৭ অপরাহ্ন
উখিয়া-টেকনাফের ২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা পরিবার কোরবানির মাংস পাচ্ছে!

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রায় ২ লাখ ১২ হাজার পরিবার কোরবানির ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছে জাঁকজমক ভাবে। ইতোমধ্যে প্রতিটি পরিবারের মাঝে কোরবানির মাংস বিতরণ করার প্রস্তুতি নিয়েছে বিভিন্ন এনজিও সংস্থা। এসব এনজিও সংস্থা ইতোমধ্যে তালিকা প্রণয়ণের কাজ প্রায় চুড়ান্ত করেছে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয়দের মাঝেও বিতরণ করা হবে কোরবানির মাংস।কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন জানিয়েছেন, তালিকা প্রনয়নের কাজ চলছে। প্রতি পরিবারের মাঝে কত কেজি করে মাংস বিতরণ হবে এটি চুড়ান্ত হয়নি। তবে বিতরণের জন্য যত মাংস নির্ধারণ হবে তার ৩০ ভাগ স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণের নির্দেশনা রয়েছে। ৭০ ভাগ বিতরণ হবে আশ্রিত রোহিঙ্গা পরিবারের মাঝে। প্রতিটি পরিবার কোরবানির মাংস পাবে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) আবুল কালাম সরকারি উদ্যোগে গরু কেনা হয়নি উল্লেখ করে বলেন, আমরা বিভিন্ন ব্যক্তি ও এনজিওর মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জন্য যেসব গরু পেতে যাচ্ছি এতে সংখ্যা কত হয় তা চুড়ান্ত হয়নি। সেগুলো একত্রিত করে যেখানে, যতটা দরকার ততটা হিসাব করে পাঠানো হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ক্যাম্প ইনচার্জদের তত্ত¡াবধানে মাংস বণ্টন করা হবে। তিনি বলেন জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৫৭। তবে পরিবার রয়েছে প্রায় ২ লাখ ১২ হাজার।প্রাপ্ত তথ্যমতে, তুরষ্ক ভিত্তিক এনজিও ডায়নেট ফাউন্ডেশন ৫০ হাজার কেজি মাংশ বিতরণ করবে রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মাঝে। ওই এনজিও’র একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিশ্বের ১৬০টি দেশে তাঁরা কোরবানির মাংশ বিতরণ করেন। এতে সর্বোচ্চ বিতরণ হবে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ও স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে। আশাকরি দুয়েক দিনের মধ্যে সবকিছু চুড়ান্ত করে তালিকা প্রকাশ করতে পারব।

অপরদিকে, রোহিঙ্গা ও স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সুষ্ঠুভাবে কোরবানির মাংস বিতরণের প্রশাসনিক উদ্যোগের বাইরেও কিছু দালাল চক্র বিচ্ছিন্নভাবে মাংস বিতরণের তৎপরতা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে। এই চক্র রোহিঙ্গাদের মাঝে গরুর মাংস বিতরণের নামে বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে প্রতিবছর মোটা অংকের টাকা লোপাট করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এই উদ্যোগকে বিঘœ ঘটানোর পাশাপাশি ওই চক্র নিজেদের স্বার্থ ও আর্থিক ফায়দা লোটার কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোরবানির ঈদ নিয়ে নিজেদের মাঝে আনন্দ ভাগাভাগি করতে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে রোহিঙ্গাদের । কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা বসবাসরত আবদুল মালেক জানান, তারা স্বাচ্ছন্দ্যে কোরবানির ঈদ উদযাপন করতে চান এবং চাহিদা অনুযায়ী, কোরবানির মাংস পেলে পরিবার-পরিজনকে নিয়ে ভালভাবে খেতে পারবেন। এতে অন্তত ঈদ উদযাপনের মতো আনন্দ একটু হলেও পাবে বলে আশা তাদের।রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসরত ছব্বির আহমদ ও মহিদুল্লাহ মাঝি জানিয়েছেন গত দুই বছর আগে ঠিক এই সময় তাদের নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে পালিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে বাংলাদেশে। এখানে এবার সহ দু’বার আমরা কোরবানির ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছি। শুনেছি প্রত্যেক রোহিঙ্গা পরিবারের মাঝে মাংস বিতরণ করা হবে। যা পাই তাতেই আমাদের সন্তুষ্ট থাকতে হবে। রোহিঙ্গারা তো আর্থিকভাবে সচ্ছল নয় নিজেরা কোরবানি করবে।