এলএনজি আমদানিতে খরচ বাড়ায় গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি চাইলে এলএনজি আমদানি করতেই হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন, শিল্পায়ন আর প্রবৃদ্ধির জন্য এটা জরুরি। আর অর্থনৈতিক উন্নতি চাইলে মেনে নিতে হবে। বিদেশেও যারা এলএনজি আমদানি বা গ্যাস আমরাদি করে। এটা তারা মেনে নেয়। সোমবার (৮ জুলাই) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সদ্য সমাপ্ত চীন সফর নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৪-০৫ সালে মিয়ানমারের গ্যাস নিতে চীন, জাপান বিনিয়োগ করেছিল। ভারত সেই গ্যাস বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পাইপ লাইনে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু খালেদা জিয়া সেটা হতে দেয়নি। আমি হলে ভারতে গ্যাস নিতে তো দিতাম। আমার ভাগটাও রেখে দিতাম। সেই গ্যাসটা যদি পেতাম তাহলে এলএনজি আমদানি করতে হতো না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, আমাদের গ্যাসের প্রয়োজন আছে কি না? ২০০৮ সাল পর্যন্ত জিডিপি কতটুকু বেড়েছে? গ্যাস আমাদের আমদানি করতে হচ্ছে। এলএনজি আমদানিতে খরচ বেশি পড়ে। যেটুকু বাড়ানো হয়েছে, সেটা যদি না বাড়ানো হয় তাহলে এলএনজি আমদানি কমে যাবে। বিদেশে সব দেশে এটা করা হয়, তারা মেনে নেয়। এত বড় সমস্যায় আমাদের পড়তে হতো না। আমাদের কাছে প্রস্তাব ছিল গ্যাস বিক্রি করার। আমি রাজি হইনি। খালেদা জিয়া মুচলেকা দিয়েছিল গ্যাস বিক্রি করবে। যে কারণে ২০০১ সালে ভোট বেশি পেয়েও আমি ক্ষমতায় আসতে পারিনি। আমাকে জানতে হবে গ্যাসের মজুদ কত, বিক্রি করতে পারব কি না। প্রতি ঘনমিটার আমাদানি খরচ হয় ৬১.১ টাকা। ভারতে গৃহস্থালির জন্য স্থান ভেদে দাম ৩০-৩৭ টাকা প্রতি ঘনমিটার। বাংলাদেশ দাম ১২ দশমিক ৬০ টাকা। শিল্পে গ্যাসের দাম ১০ দশমিক ৭০ টাকা, ভারতে এটির দাম ৪০ থেকে ৪২ টাকা।
গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে আন্দোলন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, যারা আন্দোলনের সময় বলছে ভারত কমিয়েছে, ভারতে দুইবার দাম বাড়ায়। এটা তাদের নীতি। পয়লা এপ্রিল এবং অক্টোবরে গিয়ে তারা গ্যাসের দাম অ্যাডজাস্ট করে। অর্থাৎ মূল্যটা বাড়ায়। এলএনজি নিয়ে এসে আমরা ৬১ দশমিক ১২ টাকা, সেটি দিচ্ছি ৯.৮ টাকায়। তারপরও আন্দোলন। একটা মজার ব্যাপার আছে, বাম আর ডান মিলে গেছে। আমরা জিডিপি ডাবল ডিজিটে নিয়ে যাব। আমাদের গ্যাস লাগবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্যাস খাতে ১০ হাজার কোটি টাকার ওপরে বাড়ানোর পরেও ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। আন্দোলন যখন করছে তখন এক কাজ করি। যে দামে গ্যাস কিনছি সেই দামে বিক্রি করি। ৯ টাকার গ্যাস ৬১ টাকা নিই। তাহলে আর ভতুর্কি দিতে হবে না।
পাঁচ দিনের সফরে গত ১ জুলাই চীনের ডালিয়ানে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের গ্রীষ্মকালীন সভায় অংশ নেন এবং ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের নির্বাহী চেয়ারম্যান ক্লাউস সোয়াবের সঙ্গে বৈঠক করেন। ডালিয়ান থেকে বুধবার বেইজিংয়ে যান শেখ হাসিনা। সেখানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং এবং প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াংয়ের তার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। এছাড়া চীনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের চেয়ারম্যান লি ঝাংসুও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিন বৈঠকেই রোহিঙ্গা সংকটের আশু সমাধানের বিষয়টি গুরুত্ব পায় এবং চীন এ বিষয়ে মিয়ানমারকে বোঝানোর প্রতিশ্রুতি দেয় বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে দুই দেশ মধ্যে পাঁচটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা স্মারক ও একটি লেটার অব এক্সচেঞ্জে সই হয়। সফর শেষে শনিবার দুপুরে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।