ঘরে অসুস্থ্য মা জাকিয়া বেগম মৃত্যুশয্যায়। বাবা নাসির হাওলাদার রিক্সা চালক। রিক্সা চালিয়ে নাসির হাওলাদারের যে আয় তা দিয়ে ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ তো দুরের কথা সংসারের ভরপোষন চালানোই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই পড়ার ফাঁকে গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রাইভেট পড়িয়ে শিক্ষাযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে গরীব মেধাবী শিক্ষার্থী মানসুরা মীম। প্রাইভেট পড়িয়ে জমানো টাকা দিয়ে এইচএসসিতে ভর্তি হলেও আর্থিক সংকটে বর্তমানে অধরাই থেকে যাচ্ছে উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন। সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, মাত্র ১০ বছর বয়সে তার সহপাঠীরা যখন বই খাতা নিয়ে স্কুলে যেতো, ঠিক সেই সময়ে আর্থিক দৈন্যতায় মিমকে যেতে হয়েছে ঢাকার সুতার কারখানায়। দিনরাত দুই বছর সুতার কারখানায় কাজ করার ফলে ৬ষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়া হয়নি তার। ক্ষুধা ও দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে গ্রামে ফিরে দুই বছরের জমানো টাকা দিয়ে পরিবারের অসম্মতিতে ভর্তি হয় অষ্টম শ্রেণিতে। এর পর সে এ বছর চর চাপলী ইসলামিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়নের আলহাজ্ব জালালউদ্দিন কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের একাদশ শ্রেনীতে ভর্তি হয়। মা অসুস্থ থাকায় প্রায় দুই মাস হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা করালেও আর্থিক সংকটে ঘরে বসে কোন রকম হচ্ছে চিকিৎসা।
বাবা রিকশা চালিয়ে যা পায় তা দিয়ে অসুস্থ্য মায়ের ঔষধ, দু’মুঠো ভাত যোগাড় ও পঞ্চম শ্রেণিতে পড়–য়া ভাই আলাইহীমের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে মীমকে কলেজে পড়ানো তাঁর পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই মেধাবী এ মীমের স্বপ্ন হয়তো থেমে যাবে উচ্চ শিক্ষা শুরুর মাঝ সিড়িতে। শিক্ষার্থী মানসুরা মীম কান্না ভেজা কন্ঠে জানায়, ইচ্ছা না থাকলে এখন আমি হয়তো কোন কারখানার শ্রমিক হতাম। শিক্ষা জীবনের দুই বছর ঝরে গেছে কারখানায় কাজ করে। ইচ্ছে আছে ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু কে পূরণ করবে আমার স্বপ্ন? আমার বাবা রিকশা চালায়, মা ঘরে অসুস্থ্য মৃত্যুশয্যায়। কলেজে ভর্তি হয়েছি কিন্তু বই, খাতা কিনতে পারিনি। মীমের মা জাকিয়া বেগম বলেন, মীমের মতো এতো কষ্ট করে কেউ পড়বে না। ক্লাস ফাইভ পাশ করার পর সিক্সে ভর্তি করাতে পারিনি টাকার অভাবে। দুই বছর ঢাকায় সুতার কারখানার কাজ করে ১০ বছর বয়সে সংসারের হাল ধরেছে। এতো কষ্ট করেও ভালো পাশ করেছে। চর চাপলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গাজী আলী আহম্মদ জানান, মীম ঢাকা থেকে এসে কান্না কাটি করলে ওকে অষ্টম শ্রেনীতে ভর্তির অনুমতি দেই। মেধাবী হওয়ায় বিনা বেতনে পড়িয়েছি। ও এবার এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। ওর স্বপ্ন ডাক্তারী পড়া। কিন্তু ওর পরিবারে ঠিকমতো চুলো জ্বলেনা। তাই সমাজের বিত্তবানরা যদি এগিয়ে আসে তাহলে হয়তো মিমের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরন হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।