জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট- আই এসের ‘জিহাদে’ যোগ দিতে যাওয়া বাংলাদেশিদের সিংহভাগ মারা গেছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। পুলিশের জঙ্গিবিরোধী বিশেষ ইউনিট কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ট ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে কারা কারা আইএসের জিহাদে যোগ দিতে গিয়েছিলেন, তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা দেশে ফিরলেই গ্রেপ্তার করা হবে। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার তিন বছর পূর্তিতে সোমবার নিহতদের প্রতি কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান মনিরুল। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নে এসব কথা বলেন তিনি।
২০১৬ সালের আজকের রাতে হলি আর্টিজানে জঙ্গিরা আচমকা হামলা চালায়। দেশি-বিদেশি ২০ নাগরিক, দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত হন ২২ জন। নিহতদের মধ্যে জাপানের নাগরিক, আর্জেন্টিনার নাগরিক, ইতালির নাগরিক ও ভারতের নাগরিক ছিলেন। চরম উদ্বেগ ও নাটকীয়তার পর সেনা কমান্ডোরার চালানো ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’-এ জিম্মি ঘটনার অবসান হয়। কমান্ডো অভিযানে নিহত হয় পাঁচ জঙ্গি। জীবিত উদ্ধার করা হয় ১৩ জিম্মিকে। এই হামলার পর জানা যায়, উচ্চবিত্ত শ্রেণির সন্তানদের একাংশের মধ্যেও উগ্রবাদ বিস্তার লাভ করেছে। আর এদের মধ্যে বহুজন ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসের কথিত খিলাফত রাষ্ট্রে যোগ দিতে দেশ ছেড়েছেন। কেউ কেউ গেছে সপরিবারে। ইরাক থেকে ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে বাংলাদেশে হামলার হুমকিও এসেছে।
কেবল বাংলাদেশ নয়, আইএসের কথিত খিলাফত প্রতিষ্ঠায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে উগ্রবাদীরা ইরাক ও সিরিয়ায় আস্তানা গড়ে। সেখানে অবিশ্বাস্য নৃশংসতার পর শক্তিশালী দেশগুলো জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে। আর বছর খানেক আগে কথিত খিলাফতের পতন হয়। তবে বাংলাদেশ থেকে যারা জিহাদে যোগ দিতে গিয়েছিলেন, তাদের কোনো হদিস এখনো মেলেনি। মাঝেমধ্যে কারো নিহত হওয়ার খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এসেছে। তবে বাংলাদেশে পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো ভাষ্য আসেনি। মনিরুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে তাদের কাছেও সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। বলেন, ‘বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত যারা ইরাক, সিরিয়ায় কথিত জিহাদে যোগদান করার জন্য গেছে তাদের সুর্নিদিষ্ট তথ্য পাওয়াটা খুবই কষ্টসাধ্য। কারণ সেখানে সেই রকম শাসন ব্যবস্থা বা যারা কাজ করছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সুর্নিদিষ্ট তথ্য পাওয়া কঠিন।’
‘তবে আমরা জানি, যারা গিয়েছিল তাদের অনেকে নিহত হয়েছে। তবে বাংলাদেশ থেকে যারা সেখানে গিয়েছিল তাদের চিহিৃত করা হয়েছে।’ যারা জিহাদে যোগ দিয়েছিলেন, তারা চিহ্নিত হওয়ায় দেশে আসতে চাইলে প্রবেশ পথেই শনাক্ত করা সম্ভব হবে বলেও আশাবাদী মনিরুল। বলেন, ‘বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত যারা অনান্য দেশ থেকে গিয়েছে তাদের অধিকাংশ মারা গিয়েছে। তারপরও যদি কেউ ফেরত আসার চেষ্টা করে তাদের আমরা শনাক্ত করতে পারব। কারণ আমাদের ইমিগ্রেশনসহ সকল বিভাগ এই বিষয় নিয়ে কাজ করছে।’ ‘তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসব। সেই কনফিডেনস আমাদের রয়েছে।’
আর্টিজান হামলার পর জঙ্গিবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে বেশ কিছু জঙ্গি আস্তানা গুঁড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ। নিহত হয়েছেন সন্দেহভাজন শীর্ষস্থানীয় জঙ্গিরা। গ্রেপ্তারও হয়েছে বহুজন। কাউন্টার টেরোরিজমের প্রধান বলেন, তারা মনে করছেন বাংলাদেশে এই মুহূর্তে জঙ্গি হামলার ঝুঁকি নেই। তার পরেও তারা সতর্ক আছেন। জঙ্গিবাদের ক্ষেত্রে আমরা কতটা ঝুঁকিতে- জানতে চাইলে মনিরুল বলেন, ‘বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও জাতীয় প্রেক্ষাপটে আমরা বড় ধরনের ঝঁকি দেখছি না। তবে ছোটখাটো জঙ্গি হামলার ঘটনাও যাতে বাংলাদেশে না ঘটে সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’ ‘সুনির্দিষ্ট হামলার তথ্য না থাকলেও সকলকে সতর্ক থাকতে হবে এবং সমবেত চেষ্টার মাধ্যমে যে কোন হামলার প্রচেষ্টাকে রুখে দিতে পারব।’
সতর্ক থাকার কারণ জানতে চাইলে মনিরুল বলেন, জঙ্গিদের প্রতি সহনুভূতিশীল ও সমর্থক এখনো রয়ে গেছে। তারা জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে কখনও কখনও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করে। ‘কিন্তু সেটা যাতে না ওঠে সেজন্য আমরা নাগরিক উদযোগের আহ্বান জানিয়েছি। সঙ্গে আমাদের যে আইনি প্রক্রিয়া যেমন- অভিযান, গ্রেপ্তার এবং তাদের আদালতে সোপর্দ করার মাধ্যমে জঙ্গিবাদের মতবাদকে পরাস্ত করে জঙ্গি হামলা ঠেকানো সম্ভব হবে।’
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।